আমদানি না করায় পেঁয়াজের বাজার চড়া

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কায় পেঁয়াজ আমদানি করতে না চাওয়ায় সম্প্রতি দেশে পণ্যটির দাম অস্থিতিশীল রয়ে গেছে। মানভেদে পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও পণ্যটির দাম কেজিতে ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। এর আগে ভারত আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পরপরই অস্থির হয়ে উঠেছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। তখন পণ্যটির দাম ঠেকেছিল ২২০ টাকায়। তবে এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকিতে পেঁয়াজের দাম কমে ১০০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু এখন বাজারের অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের অনিচ্ছা এবং মজুত সংকটের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়েছে। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ একবারেই কম। খাতুনগঞ্জের শতাধিক আড়তের মধ্যে মাত্র মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ আছে। মূলত সরবরাহ সংকটের কারণে পেঁয়াজের দাম আবারও বলে জানান তারা। আমদানিকারকরা বলেন, আপাতত সংকট থাকলেও এরই মধ্যে নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে। ভারতও যেকোনো সময় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে পারে। এই অবস্থায় বর্তমানে ডলারের বিনিময় মূল্য ১২০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে মুনাফা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তারা শঙ্কিত। তাই ঝুঁকি নিয়ে কোনো আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ার প্রমাণ মিলেছে প্ল্যান কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের তথ্যেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, গত ৮ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে মাত্র দুটি পেঁয়াজের চালান এসেছে। এর মধ্যে ঘোষণার পরদিন ৯ ডিসেম্বর ৫৮ টন পেঁয়াজ এসেছে চীন থেকে এবং ১৩ ডিসেম্বর ৫৮ টন পেঁয়াজ এসেছে পাকিস্তান থেকে। ঘোষণার পর দেশের বাজারে প্রবেশ করলেও আমদানি হওয়া এসব পেঁয়াজের আমদানি প্রক্রিয়া হয়েছে কমপক্ষে আরও এক মাস আগে। সেই হিসাবে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প দেশ থেকে এখনও পর্য়ন্ত কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এর আগে গত ১৯ আগস্ট ভারত ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করলে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম ২০০ টাকায় উঠে যায়। তখন বাজার স্থিতিশীল করতে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ঘোষণার পর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্য়ন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৪১৯ টন। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে ১ হাজার ২১৮ টন এবং চীন থেকে ১ হাজার ২০৮ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্য়ন্ত এসব দেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি বলে জানান প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ মুনিরুল হক। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এখন নতুন মৌসুমের দেশীয় পেঁয়াজ এবং ভারত ও চীন থেকে আমদানিকৃত অল্প পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। এর মধ্যে পাইকারি পর্য়ায়ে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী ও মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বলেন, বাজারে শতাধিক কাঁচাপণ্যের আড়ত রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে পেঁয়াজ আছে সর্বোচ্চ ১০-১৫টি আড়তে। বেশিরভাগ দোকানে পেঁয়াজ না থাকার সুযোগে আমদানিকারকদের নির্দেশে কমিশন এজেন্টরা এই দাম বৃদ্ধি করেছেন। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ছাড়া অল্প পরিমাণে ভারতীয় ও চীনা পেঁয়াজ আছে। তবে তা ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি করা। এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কো কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিচ মিয়া বলেন, ‘ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির কোনো খবর আমরা পাইনি। তাই সরবরাহ সংকটের কারণে বাজার বাড়তি। আমদানি না হলে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।