নতুন উচ্চতায় ধনী-গরিব বৈষম্য
৬ বছরে বেড়েছে দেশের ধনীদের সম্পদ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য এখন নতুন উচ্চতায়। সার্বিকভাবে যা ছুঁয়েছে বিপদসীমার ঘর, যাতে বেশি বিপদে আছেন শহরের মানুষজন। খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৬ বছরে বেড়েছে দেশের ধনীদের সম্পদ, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে অর্থনীতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্য কমাতে না পারলে দেখা দিতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান। যেখানে বাস করেন ধনী শ্রেণি। তবে আভিজাত্যের চাকচিক্যের মাঝেই অবস্থান কড়াইল বস্তির। এখানেই ১৫ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস বরিশালের দুলাল মাঝির। বস্তি আর গুলশানের মধ্যবর্তী লেকে চালান নৌকা। দুলাল মাঝি বলেন, ১৫ বছর আগে ৩০০ টাকা উপার্জন করলে ২০০ টাকার বাজার করতাম। তাতেই ভালোভাবে চলে যেত। ফলে হাতে ১০০ টাকা থাকতো। এখন দিনে ৫০০ টাকা আয় করলেও কিছু থাকে না। বরং আরো ধার করতে হয়। একই অবস্থা এখানকার অন্য মাঝিদেরও। ধার-দেনা করে চলছে অধিকাংশের সংসার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শহরাঞ্চলের পরিবারপ্রতি গড় ঋণ ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বেশি। খানা জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে চরম বৈষম্যের বিষয়টি। আয়, ভোগ ও সম্পদের বৈষম্য নির্দেশক সূচক শহরাঞ্চলে ছাড়িয়েছে বিপদসীমার ঘর। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, ধনীদের আয় বৃদ্ধি অনেক। কারো কারো ১০০ গুণ পর্যন্ত ও সম্পদ বেড়েছে। এটা ভালো না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রভাবশালী মহল পলিসি নির্ধারক। তারা এমনভাবে আইন করে, তাতে তাদের সীমাহীন সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ হয়। আর অন্যদের আয় কমে যায়। বিবিএসের হিসাবে, দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ ধনীদের দখলে। অন্যদিকে ২ শতাংশেরও নিচে আয় সবচেয়ে গরিবদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বৈষম্যের অন্যতম কারণ দুর্নীতির অবাধ সুযোগ। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে এটা আরো বেড়ে যাবে। যার সমাধান হচ্ছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ, সিন্ডিকেটেই রয়েছে ধনীরা। ড. গোলাম রহমান বলেন, যদি মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, সেটার চেয়ে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বেশি না হলে এই উন্নয়ন মানুষের কোনও কল্যাণে আসবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের একেকটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা।