শুঁটকি অর্থনীতির কেন্দ্র সুন্দরবনের দুবলার চর

৬ মাসের বসতিতে কোটি টাকার ব্যবসা

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জন্য এক হিরকখণ্ড দুবলার চর। সুন্দরবনের শেষ সীমায় বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগিয়ে মাত্র ছয় মাসের জন্য ওই চরে গড়ে ওঠে শুঁটকি পল্লি। আর ওই শুঁটকি পল্লি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছ যায় ২৫০ কোটি টাকারও বেশি। দেশে শুধু মাছের চাহিদা পূরণই নয়, সরকারও বড় অঙ্কের রাজস্ব পায় ওই চর থেকে। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস চলে ব্যবসা। দুবলার চরের মূলত পাঁচটি স্থানে ওই পল্লি গড়ে উঠেছে। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাগর কম উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে সেখানে শুকানো হয়। প্রতি বছর এ কাজে যুক্ত থাকেন ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুকানো শুঁটকি চলে যায় চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাণিজ্যকেন্দ্রগুলোতে। সরাসরি সাগর থেকে নিয়ে এসে কোনো রাসায়নিক ছাড়া তাৎক্ষণিক রোদে শুকাতে দেওয়া হয় বলে স্বাদ ও গুণাগুণে অনন্য ওই শুঁটকি। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার জেলেরাই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। ছয় মাস ব্যবসা করার জন্য উন্মুখ হয়ে সারা বছর বসে থাকেন তারা। দুবলার চরটি সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আওতায়। পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুবলার চর থেকে শুঁটকি আহরণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ১০৫ টন। ওই পরিমাণ শুঁটকি থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়েছিল ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৭১ টনের বিপরীতে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৯৮ টনের বিপরীতে ৩ কোটি ২ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার ৫০০ টনের বিপরীতে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ১০০ টনের বিপরীতে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল। আর এবার শুঁটকি খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। প্রতি কেজি শুঁটকির জন্য রাজস্ব দিতে হয় ১০ টাকা। যেসব জেলেদের তিন থেকে পাঁচটি নিজস্ব মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে তাদের বলা হয় মহাজন। আর যাদের ট্রলারের সংখ্যা অনেক বেশি তাদের বলে বহরদার। এসব বহরদার ও মহাজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত লইটা, তেলফ্যাসা, ছুরি, বৈরাগী, চাকা চিংড়ি, রূপচাঁদা মাছের শুঁটকি করা হয়। মাছ শুকাতে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন। গড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন তারা। ওই চর থেকেই পাইকাররা শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত বছর প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে।