আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি সপ্তাহে নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে স্বর্ণের দাম। এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, গত রোববার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স (২৮ দশমিক ৩৫) স্বর্ণের দাম পৌঁছায় ২ হাজার ১০০ ডলার বা ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৮ টাকায়। পরের দিন সোমবার অবশ্য স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ২৮ ডলার বা ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ টাকায় নেমে আসে, তবে তার পরের দিনই তা আবার পৌঁছায় ২ হাজার ৪২ ডলারে বা ২ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৯ টাকায়। এখন পার্যন্ত এই দরেই বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আগামী ২০২৪ সালেও স্বর্ণের দর আউন্সপ্রতি ২০০০ ডলার বা ২ লাখ ২০ হাজার ৩২২ টাকার ওপরেই থাকবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণ কেনাবেচার ক্ষুদ্রতম একক ভরি বা তোলা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এই মূল্যবান ধাতুটির কেনাবেচার ক্ষুদ্রতম একক আউন্স। ১১ দশমিক ৬৬ গ্রামের সমপরিমাণ স্বর্ণকে এক ভরি বা এক তোলা বলে গণ্য করা হয়। বস্তুত, বাজারে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে গত ২ মাস ধরে; অর্থাৎ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধার পর থেকে। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বর্ণ ক্রয়ের হার বেড়ে গেছে। স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনাকারী মার্কিন সংস্থা ইউওবির মার্কেট স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান হেং কুন হাও সিএনবিসিকে বলেন, ‘যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এটা খুব সাধারণ প্রবণতা। কারণ এ সময় অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং লোকজন তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে স্বর্ণ মজুত করা শুরু করেন।’ ‘আর এটা ঠিক যে স্বর্ণের দাম বেড়েছে, কিন্তু বাজার চাঙা রাখার জন্য এই দরবৃদ্ধি জরুরি ছিল। তাই একে আমরা ইতিবাচক মনে করছি।’ অপর মার্কিন সংস্থা এমকেএস পিএমপির মেটালস স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান নিকি শিয়েলস বলেন, ‘২০১১ সালের পর এই প্রথম স্বর্ণের বাজারে এই পরিমাণ উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। আমাদের ধারণা, ২০২৪ সালে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ২০০ ডলার (২ লাখ ৪২ হাজার ২৫৪ টাকা) পর্যন্ত পৌঁছাবে।’ বাজার বিশ্লেষণকারী অপর মার্কিন সংস্থা টিডি সিকিউরিটিজের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান বার্ট মেলেক সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘গত রোববার স্বর্ণের দর ২ হাজার ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে যদিও তা খানিকটা নেমে এসেছে; তবে আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, সামনের বছরের শুরুর দিকে ফের প্রতি আউন্স স্বর্ণের দর ২ হাজার ১০০ ডলারে উঠবে এবং জুন পর্যন্ত এই দরই থাকবে।’ তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডলারের দরের ব্যাপক ওঠানামার কারণে বিশ্বের অন্তত ২৪ শতাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মজুত বৃদ্ধির পরিবর্তে স্বর্ণের মজুত বৃদ্ধিতে মনযোগী হচ্ছে। ফলে স্বর্ণ ক্রয়ের হারও বাড়ছে। ‘স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ এই ব্যাপারটি, ’ সিএনবিসিকে বলেন বার্ট মেলেক।