মূল্যস্ফীতি ও তহবিল সংকট
টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাই করছে স্টার্টআপগুলো
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তহবিল সংকট আর চড়া মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো। এই অবস্থায়, টিকে থাকতে এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক ব্যয়-সাশ্রুয় ও কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। শিল্পটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তাদের বেতনভুক্ত কর্মী সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তাদের মতে, ফ্রিল্যান্সারদের বাদ দিয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যে কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৩৫ হাজারে নেমে এসেছে। দুই বছর আগে দেশের মহানগরগুলোর বাইরেও কিছু জেলা ও ছোট শহরে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছিল ই-কমার্সে মুদিপণ্য ব্যবসার অগ্রদূত চালডাল ডটকম। কিন্তু, জ্বালানি ও পণ্যদ্রব্যের অনেকটাই দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। কারণ, জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা আগের মতো পর্যাপ্ত অর্ডার দিচ্ছেন না। ফলে কোম্পানিকে এই উদ্যোগে আর্থিক লোকসান গুনতে হয়, এবং পরে এসব এলাকায় কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। এমনকি দ্রুতবর্ধনশীল কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান, যারা প্রায় প্রতি মাসেই কর্মী নিয়োগ করতো, তারাও নিয়মিত বিরতিতে পর্যায়ক্রমে কর্মী ছাঁটাই করেছে- বেতন বাবদ ব্যয় কমাতে। আগের কর্মী সংখ্যা এ খাতে হওয়া উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির প্রমাণও ছিল, ফলে মাত্র দুই থেকে ৩ বছরে চাকরির সুযোগ চারগুণ হয়েছিল। পরামর্শক সংস্থা- লাইটক্যাসেল পার্টনার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোয় ১২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়। কিন্তু, ২০২৩ সালে তা ৭২ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সে তুলনায়, ২০২১ সালে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল বিনিয়োগ। এসময় মোট ৪৩২ মিলিয়ন ডলার পায় এদেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো, যার মধ্যে বিকাশ- এ সফটব্যাংকের করা ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে এবছরের মার্চ থেকেই ১০ শতাংশের কাছাকাছি উচ্চ হারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, ফলে ভোক্তাদের ব্যয়ও কমিয়ে কোমরের বেল্ট আঁটো করতে হয়েছে। আর তাতেই আগের মতো বেচাবিক্রির পরিমাণ ধরে রাখা ব্যবসাগুলোর জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শেবা প্ল্যাটফর্মের কথা। শেষমুহূর্তে এসে একটি বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থা পিছু হঠায় দেশের সর্ববৃহৎ এই কারিগরি ও উদ্যোক্তা সেবা অর্ডারের প্ল্যাটফর্মকে গত বছরে তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হয়। তীব্র তহবিল সংকটে ৫০০-এর বেশি থেকে নিজেদের কর্মী সংখ্যা একশর’ও কমে নামিয়ে আনতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে চলতি বছর স্থানীয় একটি বিনিয়োগকারীর সমর্থন পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেবা প্ল্যাটফর্ম। এখন তারা এসএমই সলিউশনস প্যাকেজ অ্যাপের মাধ্যমে লক্ষণীয়ভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। এজন্য ২৫০ জনেরও বেশি কর্মচারী নিয়োগও করেছে। স্টার্টআপ শিল্পের অভ্যন্তরীণরা জানান, শপআপ ও ফুডপান্ডা-সহ উল্লেখযোগ্য কিছু স্টার্টআপ ছেড়ে আসা নির্বাহীদের থেকে এই বছরে চাকরিদাতারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরির আবেদন পান। চলতি বছরজুড়েই এই প্রবণতার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করেছেন তারা। অথচ মহামারির সময়ে হাজার হাজার ব্যক্তির জন্য আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হয়েছিল এসব প্ল্যাটফর্ম। চাকরির গোপনীয়তা চুক্তির কথা উল্লেখ করে- নাম না প্রকাশের শর্তে এমন অন্তত এক ডজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সাথে কথা বলেছেন। তারা জানান, গত ১৫ থেকে ১৭ মাসে এ দুটি স্টার্টআপ তাদের প্রত্যক্ষ কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।