আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বছর শেষে ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট রিজার্ভ প্রায় ১৭.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তানুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১৭.৪৮ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের কথা ছিল। সেই হিসাবে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণে আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১৭.৪৮ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভের সংকটের মধ্যেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলোর কাছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৭.৮ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকাররা বলেন, তেল, গ্যাস, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ রয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ ধরে রাখতে ভিন্ন উপায়ে ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলো থেকে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার কিনেছে। তবে আগের অর্থবছরে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনার পরিমাণটা খুবই সীমিত ছিল। তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ডলার সংকটে রয়েছে। তারপরও আইএমএফের শর্তানুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিপিএমণ্ড৬ পদ্ধতিতে ২৮ ডিসেম্বর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১.৭ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ হিসাব করার সময়ে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া বিলসহ এক বছরের কম সময় মেয়াদের দায়গুলো বাদ দেয় আইএমএফ। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব করা গ্রস রিজার্ভ ও আইএমএফের কাছে দেওয়া নিট রিজার্ভের হিসাবে পার্থক্য থেকে যায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনও ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে, আবার কখনও ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনে। ডলার সংকটের মধ্যেও কীভাবে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা আছে, কিন্তু ক্যাশ টাকার সংকট রয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাওনাও ডলারে মেটাতে পারে। গত ২৬ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ও অন্য তফসিলি ব্যাংক থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার মিলি মোট ৩০০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩.৫৮ ডলার বিক্রি করা হয় আমদানি বিল পরিশোধের জন্য। বর্তমানে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ১০৯.৫০ টাকায়। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজেদের তহবিল থেকে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহে সর্বোচ্চ ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। আমদানিকারকদের প্রায়ই ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হয়। যদিও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আমদানির বিল মেটাতে কিছুটা কম দামে ডলার কিনতে পারছেন। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ ১০৯.৫০ টাকা রেটে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার কথা থাকলেও অনেক ব্যাংকই ১২০-১২২ টাকা রেটে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোতে ডলারের যে সংকট রয়েছে, তার চিত্র দেখা যায় বৈদেশিক মুদ্রার নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) হোল্ডিংয়ের অবস্থানে। বর্তমানে প্রায় ২০টি ব্যাংকের এনওপি শর্ট পজিশনে রয়েছে। কোনো ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওই ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা সম্পদ ও দায়ের মধ্যে পার্থক্য। সম্পদ যখন দায়ের চেয়ে বেশি হয়, তখন ওই ব্যাংক এনওপি লং পজিশনে থাকে। আবার দায় যখন সম্পদের চেয়ে বেশি হয়, তখন ওই ব্যাংক এনওপি শর্ট পজিশনে থাকে।