তৈরি পোশাক আমদানি-রপ্তানি
বন্দরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আইন নিয়ে বিভ্রান্তি
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) অনুযায়ী শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য চালানে বন্দর সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। কিন্তু গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালানে বিভিন্ন চার্জের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই চার্জে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় প্রতি টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনারে ১ হাজার টাকার বেশি বাড়তি ব্যয় যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। বন্দরে কনটেইনারের স্টোর রেন্ট, আনস্টাফিং চার্জ ও রিভার ডিউজ খাতের চার্জের ওপর এই ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২১ সালে এসআরও’র পৃথক দুটি আদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী শিল্প ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর জন্য আমদানি ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ওপর বন্দর পরিষেবায় শতভাগ ভ্যাট ছাড় দেয়। তবে ২০২২ সালের অর্থ আইনে আন্তর্জাতিক পরিবহন সেবা এবং জাহাজে মালামাল বোঝাই ও খালাস-সংক্রান্ত সরবরাহ সেবার ওপর ভ্যাটের ‘শূন্য’ হার প্রত্যাহার করা হয়। এটি গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৮ সালের ২০ মার্চ এক আদেশে শতভাগ রপ্তানিকারক পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সেবার বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিল। ২০২২ সালের চার জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর দুটি সেবা খাতে ভ্যাট আদায়ের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্থ আইন ২০২২ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি পোশাক চালানের ক্ষেত্রে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। গার্মেন্ট মালিকরা বলেছেন, সরকারের এসআরও সুবিধা থাকার পরও ভ্যাট আদায় করা অযৌক্তিক। তাছাড়া বন্দর সেবা চার্জের সাথে স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকরকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ প্রদানকারী আন্তর্জাতিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটরের স্থানীয় এজেন্টদের বা শিপিং এজেন্টদের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টদের পরিবর্তে গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে এই খাতে ভ্যাট আদায় করছে। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারবাহী পণ্যের প্রায় ৪৫ শতাংশ পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। এছাড়া রপ্তানির বেশিরভাগ পণ্যই তৈরি পোশাক। ভ্যাট আদায় বন্ধে গত ১ অক্টোবর এনবিআরের সাথে বিজিএমইএর ঊর্ধ্বতন নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত ৪ অক্টোবর বিজিএমইএর ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানকে চিঠি দিয়ে ভ্যাট আদায় বন্ধের অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মুসক নীতি) বরাবরে চিঠি দেন ভ্যাট কমিশনার। বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। ক্রমাগত কমছে রপ্তানি আদেশ। এই পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের বন্দর সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় অব্যাহত থাকলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিতে সক্ষমতা হারাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই সংকটময় মুহূর্তে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া এই ভ্যাট গার্মেন্ট মালিকদের সাথেও সংশ্লিষ্ট নয়। রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা বজায় রাখতে পোশাক শিল্পের চালানের বিপরীতে ভ্যাট আদায় বন্ধ করতে হবে।’ সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘এসআরও অনুযায়ী তৈরি পোশাক শিল্পের চালানে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হলেও অর্থ আইনে এই সুবিধা বাতিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই নির্দেশনা পাবো।’ এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘শিগগিরই বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করব, যাতে তারা তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখে। এর ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা ভ্যাট মওকুফের সুবিধা পাবে।’ তবে অন্যান্য খাতকে বন্দরে পরিষেবার ওপর ভ্যাট দিতে হবে বলে জানান তিনি।