খাদ্যের বাড়তে থাকা দাম বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে এক বছর ধরেই খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। ‘খাদ্যনিরাপত্তা’ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক নিয়মিত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় গত ডিসেম্বর মাসে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হারের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চারটি শ্রেণিতে রেখেছে। বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাদ্যের মূল্যস্ফীতি শ্রেণিতে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ হিসাবে (অক্টোবর-নভেম্বর) প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ভুটান ও নেপালে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম ছিল। অনেক বেশি ছিল পাকিস্তানে। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে এখন মোট পরিবার বা খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করে দেখা যায়, প্রায় ২ কোটি ৯১ লাখ পরিবারের জন্য খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে খাদ্যশস্য আমদানি (আমদানি বিল পরিশোধ বিবেচনায়) ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। শস্য নয়, এমন খাদ্যপণ্য আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে আছে। সরকার আপৎকালীন মজুত করছে। ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর দেশে আপৎকালীন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) মজুতের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১৮ লাখ টন, যা গত জুনে ছিল ১৭ লাখ ৬০ হাজার টন। সরকার লক্ষ্যের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি চাল সংগ্রহ করেছে। বিশ্বব্যাংক আরো বলেছে, ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে খাদ্যশস্য আমদানি (আমদানি বিল পরিশোধ বিবেচনায়) ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। শস্য নয়, এমন খাদ্যপণ্য আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। চালের দাম এক বছর ধরে প্রায় স্থিতিশীল আছে বলে উল্লেখ করা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। আরও জানানো হয় যে গত এপ্রিল মাস থেকে সরু চালের দাম কমেছে। বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সেটি রয়েছে উচ্চমূল্যে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বাজারে মোটা চালের প্রতি কেজির দর ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। মোটা চালের দাম এরপর থেকে বাড়তে বাড়তে ৫০ টাকার আশপাশে ওঠে। সেটা আর তেমন কমেনি। এখন মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। টিসিবির তথ্যে আরও দেখা যায়, ওই সময় বাজারে খোলা আটার প্রতি কেজির দর ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। একইভাবে অনেকটাই বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। যেমন মোটা দানার মসুর ডালের দাম ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এখন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছিল করোনাকালের শুরুতে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ বেশির ভাগ পণ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতে থাকে। ফলে বাড়তে থাকে মার্কিন ডলারের দাম, যা পণ্য আমদানির খরচ বাড়িয়ে দেয়। টিসিবির তথ্যে আরও দেখা যায়, ওই সময় বাজারে খোলা আটার প্রতি কেজির দর ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। একইভাবে অনেকটাই বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। যেমন মোটা দানার মসুর ডালের দাম ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এখন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। ২০২২ ও ২০২৩ সালের বেশির ভাগ সময় মাছ, মাংস, সবজি এবং নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়তি ছিল। সরকারও জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়িয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব ছিল। এখন সেটি কমে এলেও ডলারের দাম কমছে না।