ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিকল্প বাজারের খোঁজে রপ্তানিকারকরা

পোশাক পণ্যের খুলছে নতুন দুয়ার

পোশাক পণ্যের খুলছে নতুন দুয়ার

মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সম্পদে অপ্রতুল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে। কিন্তু নিন্দুকদের আশঙ্কা অসত্য প্রমাণ করে একের পর এক বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই এগিয়ে যাওয়ার পথ রচিত হয়েছিল কিছু অভূতপূর্ব ঘটনা, অভিনব ভাবনা, ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগে। আমরা ফিরে দেখছি বাংলাদেশের উজ্জ্বল সেসব মুহূর্ত। অকল্পনীয় সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেশের এই রূপান্তর ও উন্নতির পেছনে অন্যতম প্রধান অবদান আছে তৈরি পোশাকশিল্পের। আশির দশকের শুরুতেও তৈরি পোশাকশিল্প ছিল এক মিলিয়ন ডলারের কম মূল্যমানের শিল্প, এখন যার মূল্যমান প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। একসময়ের দরিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপীড়িত হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বৈশ্বিক বাজারে যার শেয়ার ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। শুরুর দিকে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রসারের পেছনে মাল্টিফাইবার অ্যাগ্রিমেন্ট নামে একটি বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যকে কোটামুক্ত করে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত শুল্কমুক্ত পলিসির কারণে একটি উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আয় অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেন। এতে বলা হয়, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি কার্যকর করেছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই, শ্রমিকনেতারা এভাবে উদ্বেগ জানালেও মালিকপক্ষ ছিল চুপচাপ। যদিও সরকার শ্রম আইন সংশোধনের একটি উদ্যোগ শেষ মুহূর্তে স্থগিত করেছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প খাত থেকে। আর এই দেশীয় তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। এরমধ্যে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ বাজার যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রপ্তানি করে মোট আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে এসব প্রচলিত বাজার থেকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বড় বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। একই চিত্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির আরেক বড় বাজার কানাডায়ও। পোশাক পণ্যের বড় বাজারগুলোতে রপ্তানি কমায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে উদ্যোক্তাদের মাঝে। বাজারের এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে এ খাত থেকে দ্রুতই কমা শুরু হতে পারে রপ্তানি আয়। তবে এরই মধ্যে বিকল্প বাজার সন্ধানের পথে হাঁটা শুরু করেছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বা অপ্রচলিত বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। বড় বাজারগুলোর ওপর অতিনির্ভরতা এড়াতে অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে নেওয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। সরকারের পক্ষ থেকেও রপ্তানিতে দেওয়া হচ্ছে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা। সব মিলিয়ে দেশীয় পোশাক পণ্যের রপ্তানি মন্দার এ বাজারে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পোশাকের অপ্রচলিত বা বিকল্প বাজার।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ইউরোপীয় সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) যে পরিমাণ পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের (প্রথম পাঁচ মাস) তুলনায় শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে আগের অর্থবছরের চেয়ে তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছিল প্রায় ১০ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়েছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে বাড়ে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করছেন, বৈশ্বিকভাবে ২০২৩ সাল পোশাক খাতের জন্য ২০২২ সালের মতো এতটা ভালো ছিল না। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে ইউরোপের দেশগুলোয় রপ্তানি হয়েছে ৯০৫ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে (প্রথম পাঁচ মাস) ছিল ৯০৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এসময়ে ইইউভুক্ত দেশসমূহে পোশাকের মোট রপ্তানি আয় ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে ৪৭ শতাংশে নেমেছে। এরমধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার জার্মানিতে গত পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি কমেছে ১৫ শতাংশ। দেশটিতে আলোচিত সময়ে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৩১ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৭২ কোটি ডলার। এ হিসাবে রপ্তানি কমেছে ৪১ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশটিতে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক বিক্রি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ৩২৮ কোটি ডলারে নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশটিতে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক বিক্রি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ৩২৮ কোটি ডলারে নেমেছে। এ হিসাবে মার্কিন মুলুকে রপ্তানি কমেছে ২০ কোটি ডলারে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে ১৮টি দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি পোশাক বিক্রি করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে অন্যতম প্রধান বাজার জাপান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত