জনশক্তি রপ্তানিতে মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২১.৯২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর যা ছিল ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে গত দুই বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচেই স্থবির হয়ে আছে। ২০২৩ সালে বিদেশে রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। আর এই অর্জনের পেছনে অন্যতম কারণ হলো সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মী (জনশক্তি) নিয়োগে কোটা বাড়ানো এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলে দেওয়া। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত বছর বিশ্বের ১৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ১৩ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। তবে জনশক্তি রপ্তানিতে মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২১.৯২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর যা ছিল ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে গত দুই বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচেই স্থবির হয়ে আছে। চার বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়া তার শ্রমবাজার খুলে দেয়। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে সৌদি আরবের পরই এখন মালয়েশিয়ার অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি ম্যানুফাকচারিং, নির্মাণ, পরিষেবা, প্ল্যান্টেশন, কৃষি, খনি এবং এমনকি গৃহস্থালি পরিষেবার মতো বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের ৩.৫১ লাখ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। একইসঙ্গে সৌদি আরবের সব ফার্মে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণে গত দুই বছরে জনশক্তি রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে এই দেশের সামগ্রিক অবদান উল্লেখযোগ্য। সৌদি আরব গত বছর বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে নির্মাণশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বার ও ড্রাইভারসহ বিভিন্ন খাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪.৯৮ লাখ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রায় ৩৮ শতাংশ। শ্রম নিয়োগকারীরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে অভিবাসন থমকে গিয়েছিল। সে সময় যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি, তারা পরবর্তী বছরগুলোতে বিদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন। যদিও এসব ভালো খবরের সঙ্গে কিছু মন্দ খবরও রয়েছে। বহু কর্মী বিশেষ করে ওমান, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ভুয়া বা জাল চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। যেমন- মালয়েশিয়া যেতে অনেক কর্মী সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। যেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নির্ধারিত এ অর্থের পরিমাণ মাত্র ৭৯ হাজার টাকা। গত বছর রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানির আরেকটি কারণ হলো- মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যের পাশাপাশি ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও জনশক্তি রপ্তানি করা। গত বছর কৃষি, আতিথেয়তা ও ম্যানুফাকচারিংয়ের মতো খাতে ১৬ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। যুক্তরাজ্যেও পরিচর্যাকারী, গৃহকর্মী ও আতিথেয়তার মতো খাতে বাংলাদেশের ১০ হাজার ৪৩৭ জন কর্মী নিয়োগ পেয়েছে।