আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিকে শোকজ করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন ভোক্তার মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি মামলা চলমান আছে। সেগুলো নিষ্পত্তি না করেই তারা আবারও ব্যবসা শুরু করেছে। এর কারণ জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটিকে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মূলত মামলা নিষ্পত্তি না করে কীভাবে তারা ক্যাম্পেইন শুরু করলেন, তাদের কাছে সেটিই জানতে চাওয়া হয়েছে। ভোক্তার ডিজি জানান, ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এতদিন জেলে থাকায় ভোক্তা অধিকার মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কিন্তু এখন যেহেতু তিনি কারামুক্তি পেয়েছেন সেহেতু মামলা নিষ্পত্তিতে ভোক্তা অধিকারের ওপর ভোক্তাদের চাপ রয়েছে। ভোক্তা অধিকারকে ভোক্তার স্বার্থ দেখে কাজ করতে হয়। তাই প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর বিকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে বের হন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মো. রাসেল। এর আগে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর চেক জালিয়াতি, টাকা দিয়ে পণ্য না পাওয়াসহ নানা অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অনেকগুলো মামলা হয়। গত বছরের ৬ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান শামীমা নাসরিন। কারামুক্তির কয়েকদিনের মাথায় ইভ্যালিতে গ্রাহকের জন্য সাড়া জাগানো আয়োজন নিয়ে আসার ঘোষণা দেন রাসেল। ২৩ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ওয়ালে ‘বিগ ব্যাং’ শিরোনাম একটি পোস্টার পোস্ট করেন তিনি। এর ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘কোনো সমস্যা বা দূরত্ব না থাকলে সম্পর্ক সবসময়ই মধুর হয়। আমাদের সরবরাহকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছেন গ্রাহকদের সেরা অফার দেয়ার জন্য। আর দীর্ঘ সময়ের এই দূরত্ব কেবল ইভ্যালির ‘বিগ ব্যাং’ অফারের মাধ্যমে ঘোচানো যাবে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা একসঙ্গেই ইতিহাস গড়ব ইনশাআল্লাহ। (যা হবে) বিজয়ের ইতিহাস, অসম্ভবকে সম্ভব করার ইতিহাস।’ পরে ২৯ ডিসেম্বর এক ফেসবুক লাইভে রাসেল বলেন, ‘ইভ্যালিকে ব্যবসা করতে দেয়া হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গ্রাহকদের সব দেনা পরিশোধ করা হবে। আমি এটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলছি। সেটি কীভাবে সম্ভব হবে তার সব উত্তর আমি দেব।’ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংবাদ সম্মেলন করে গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে বলে জানান রাসেল। দেনা পরিশোধের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, আমাদের কাছে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। নিঃসন্দেহে এটি বড় অ্যামাউন্ট। কিন্তু বৃহৎ স্কেলে চিন্তা করলে আজকের দিনে ইভ্যালি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-কমার্স। গ্রাহক কখনোই আমরা ধরে রাখতে পারতাম না, যদি মার্চেন্টরা স্পেশাল প্রাইস না দিতেন। এই ব্যবসায়ীরা যে বিশেষ মূল্য আমাদের দেন, সেখান থেকেই আমরা একটা প্রফিট রেখে সেগুলো সেল করি। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে এত দেনা, কিন্তু দেশের ৫ শতাংশ লোকও যদি ইভ্যালি থেকে তাদের পণ্য নেয়, তাহলে এ দেনা পরিশোধ করা খুবই সহজ।’ ইভ্যালি নতুন অফার বাজারে নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে রাসেল বলেন, ‘আজকের ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, আমি যা লাভ করব সেটা দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করব। আজ লাভের টাকা দিয়ে অল্প কিছু গ্রাহককে হলেও অন্তত এ দেনা থেকে মুক্তি পেতে চাই।’ এর আগে ইভ্যালির নতুন কার্যক্রমের ওপর নজর রাখতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিসিএ)। তারই ধারাবাহিকতায় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এ শোকজ দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিএমপিসিএ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।