এক সময় বলা হতো ভাতের ওপর চাপ কমান বেশি করে আলু খান। দিন বদলেছে। দেশের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত বা চাল; দ্বিতীয় খাদ্য আলু। সাধারণত বাজারে আলুর দাম কম থাকলেও বর্তমানে তা চালের দামকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি কেজি পুরোনো আলু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়। ভালো মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। সে হিসাবে দুই কেজি মোটা চাল কিনতে হচ্ছে বলতে গেলে এক কেজি আলুর দামে। আবার দেড় কেজি নাজিরশাইল চালের দামে কিনতে হচ্ছে এক কেজি আলু। বাজারে নতুন আলুর দামও চড়া। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকায়। নতুন বড় আকারের আলুর দাম অবশ্য ৭৫-৮০ টাকা। সদ্য বিদায়ি ২০২৩ সালে আলু নিয়ে ক্রেতাদের পোহাতে হয়েছে বেশ দুর্ভোগ। উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং ২২ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকা। তারপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় করতে হয়েছে আমদানি। যদিও বাজার আর স্থিতিশীল হয়নি। এমনকি নতুন বছরেও আলুর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পুরোনো বড় আলু বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। ছোট ও মাঝারি মানের আলু বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা কেজিতে। আর নতুন আলুর দামও ৬০-৭০ টাকা কেজি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে দেশে দৈনিক মাথাপিছু আলু খাওয়ার হার ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০০০ সালে মাথাপিছু ভোগ ছিল ৫৮ গ্রাম, ২০১০ সালে ৭০ দশমিক ৩০ গ্রাম এবং এরপর ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ দশমিক ৩০ গ্রামে। ভোক্তা অধিদপ্তর কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে জরিমানা ধরে। সেখানেই শেষ। সাধারণ মানুষের বাজারে এলে দাম শুনে মাথা ঘোরে। বাজার হলো বেওয়ারিশ। এখানে দেখার বা কথা বলার কেউ নেই। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে আলুর মাথাপিছু ভোগ ৬৯ দশমিক ৭০ গ্রাম।
আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী সম্পর্কে সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, আলুর দাম নিয়ে গত বছর থেকে যে অবস্থা দেখা দিয়েছিল তা খুবই দুঃখজনক। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আগাম আলু বাজারে আসে। সে হিসেবে এবারও কিছু আলু বাজারে এসেছে, তবে দাম কমেনি। বরং বেড়েছে। আমার মনে হয়, আলুর দাম স্থিতিশীল হতে আরও এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আবাদ ও উৎপাদনের তথ্যের হিসাবে ব্যাপক পার্থক্য থাকে।
এসব তথ্যের কারণে নীতিনির্ধারণীতে যারা কাজ করেন তারা খুবই বিপদে পড়েন। আলুর ক্ষেত্রে সম্ভবত চাহিদা ও জোগান অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ নেই। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হালিপ্রতি ৩ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুগ ও মসুর ডালের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা আগের চেয়ে ১০ টাকা বেশি। দেশি মসুর ডালে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১৫ টাকায়। পুরোনো আলুর দাম এত বেশি কেন? জানতে চাইলে বিক্রেতা বাঁধন সরকার বলেন, ‘এগুলো বাছা বাছা (বড় এবং একই আকারের), আলু বিরিয়ানি ও কাচ্চি বিরিয়ানিতে ব্যবহার হয়। নতুন আলু দিয়ে বিরিয়ানির স্বাদ কম। গত ৫-৬ দিন ধরে ৮০-১০০ টাকা কেজিতে এসব আলু বিক্রি হচ্ছে। বাজারটির ৪টি আড়তে একই দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়।’ তেজগাঁও কলমিলতা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. ইয়াসিন হোসেন বলেন, প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, শিম ৮০ টাকায়, উচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। মহাখালী কাঁচা বাজারে পুরোনো আলু ৮০-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের চালের আড়তদার সাইদুর রহমান জানান, প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৪৮-৫২ টাকা। নাজিরশাইল ৭০-৭৫ টাকা, আমনের লাল চাল ৬৫ টাকা কেজি। বাজারে শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দাম কমেনি। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০, গাজর ৫০, শালগম ৪০, মুলা ২৫-৩০, শিম ৬০-৮০, উচ্ছে ৮০-১০০, শসা ৪০, ক্ষিরা ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৪০-৫০, দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০, কাঁচা মরিচ ১০০, দেশি রসুন ২৫০, আমদানি করা রসুন ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায় এবং কলা ২০-৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা সেলিম হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগি ১৮৫-১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, নির্বাচন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য মুরগির চাহিদা বেড়েছে।
এদিকে গত বুধবার ক্রেতাদের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে মুরগি ও ডিম বিক্রি করতে রাজধানীর শনির আখড়ার গোবিন্দপুর বাজারে আড়ত খুলেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
মুরগির দাম সম্পর্কে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আমরা সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম এনে বিক্রি করব। এতে দাম অনেকটা কম থাকবে। কারওয়ান বাজারে কথা হয় ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীত মৌসুমেও সবজির দাম বেশি। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনা যায় না। তিনি বলেন, বাজারের ওপর সরকারের হাত নেই।