ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ মাসে ৪৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি

পাঁচ মাসে ৪৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি

আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত বেঁধে দেওয়া, হুন্ডি ঠেকাতে কড়াকড়ি আর আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোয় ডলারের সংকট কিছুটা কমেছে। সব মিলিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে কমেছে বিদেশি লেনদেনের ঘাটতি। গত নভেম্বর শেষে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় গত বছর দেশে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে এলসি অনেকটা কমে যায় এবং অর্থ পাচারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এলসিতে কড়াকড়ির কারণে ওই সময় ব্যবসায়ীরা বিরোধিতা করলেও এখন তার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাণিজ্যে ঘাটতি পুরোপুরি কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি ডলারের। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ৪৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৯ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। সর্বশেষ তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়নি। এই সূচকে উল্টো ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে। এই সময়ে ৫৮ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। আগের অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাব ঘাটতিতে ছিল। অর্থাৎ এ বছরের শুরুতে চলতি হিসাব এখন ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫৬৭ কোটি ডলার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে ৮৮১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ৮৭৯ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। এদিকে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ যেখানে ২১৬ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমেছে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। দেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া আলোচিত সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার চলে গেছে। এর আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত