খেজুরের গুড়ের চাহিদা বাড়ছে শহরে

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

একসময় গ্রামকেন্দ্রিক ছিল খেজুরের রস ও গুড়ের মতো পণ্যের বাজার। এখন শহরের মানুষের কাছেও এসব পণ্যের কদর বাড়ছে। দেশের বাজারে চিনির বিকল্প পণ্য হিসেবে গুড়ের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে শীতকালে খেজুরের রসের মতো গুড়েরও চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পায়। একসময় খেজুরের রস ও গুড়ের বাজার ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। এখন অনেকে চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় খেয়ে থাকেন। এতে কয়েক বছর ধরে শহরে গুড়ের চাহিদা বেড়েছে। দেশে গুড় উৎপাদন যে খুব বেশি, তা বলা যাবে না। যেহেতু উৎপাদন সীমিত, সেহেতু একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ভেজাল গুড় তৈরি করেন। এ নিয়ে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতকালে শহরে খেজুরের গুড়ের বেশ চাহিদা থাকে। বাসাবাড়িতে তো বটেই, পাড়ামহল্লা ও রাস্তার ধারে বসা পিঠার দোকানেও খেজুরের গুড়ের ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়া শহরের কোনো কোনো এলাকায় কিছু চায়ের দোকানে চিনিমিশ্রিত চায়ের পাশাপাশি গুড়ের চা-ও এখন সমাদৃত হচ্ছে। চায়ে অবশ্য আখের চেয়ে খেজুরের গুড়ের ব্যবহার একটু বেশি হয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইট অনুসারে, দেশে প্রতি বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টন গুড় উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে খেজুর ও তালের রস থেকে উৎপাদিত গুড়ের পরিমাণ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টন। এর বড় অংশই খেজুরের গুড়। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে গুড়ের বাজার আরো বড়। অভিযোগ আছে, এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে চড়া দামে বিক্রি করেন। খেজুরের গুড়ের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে এখন ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড় পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অধিকাংশ গুড়েই ভেজাল হিসেবে চিনি মেশানো থাকে। নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার গাছিদের দাবি, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিনিসহ নানা রাসায়নিক উপকরণ মিশিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করেন। এতে খেজুরের গুড়ের প্রকৃত স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় না। খেজুরের গুড়ের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে গাছিদের কাছ থেকেই সরাসরি গুড় সংগ্রহের পরামর্শ দেন তারা। গুরুদাসপুরেরই মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, রাহেন গাইনসহ কয়েকজন গাছি বলেন, দিন দিন খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জ্বালানিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। এ কারণে গুড়ের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে বাজারে চাহিদা বাড়ছে, গাছিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তাই গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে সরকারি সহায়তা দাবি করেন তারা। অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শীতে খেজুরের কাঁচা রস পান করা যাবে না। তবে রস জ্বাল দিলে এর মধ্যে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। তাই জ্বাল দিয়ে, গুড় বা চিনি তৈরি করে খাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, স্ফুটনাঙ্কের ওপর তাপমাত্রায় জ্বাল দিতে হবে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ঠান্ডা করে খেতে হবে। খেজুরের কাঁচা রসে ভেজানো পিঠাপুলি খাওয়া যাবে না। দেশজুড়ে নাটোরের খাঁটি খেজুরের গুড়ের চাহিদা থাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উৎপাদনকারীরা। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা জাল দিয়ে খাঁটি গুড় উৎপাদন করছেন তারা। আর টানা ৫ বছর পর এবার খেজুরের গুড়ের দাম বৃদ্ধিতে খুশি উৎপাদনকারীরা। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আরও ১৩০ কোটি টাকার ওপরে এই গুড় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ গুড় বাজারে খেজুরের গুড় বিক্রি শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা ভোরে খেজুরের গুড় কিনতে ভিড় করেন এখানে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।