ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রযুক্তিতে বদলে গেছে তৈরি পোশাক খাত

প্রযুক্তিতে বদলে গেছে তৈরি পোশাক খাত

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের রফতামুখী তৈরি পোশাক খাত। শ্রমিক নিজেই করতে পারছেন তার কাজের মূল্যায়ন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে কারখানার উৎপাদনশীলতা, তেমনি শ্রমিকরাও পাচ্ছেন বোনাস-প্রণোদনা। একই সঙ্গে হিসাব কষার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের এগিয়ে রাখতে উদ্যোক্তারা উৎপাদনে যুক্ত করে চলেছেন স্বয়ংক্রিয় নানা আধুনিক ব্যবস্থা। এমনই এক সংযুক্তি স্ট্যান্ডার্ড মিনিট ভ্যালু প্রযুক্তি। শ্রমিকরা কাজ শুরুর আগে নিজের আইডি কার্ড পাঞ্চ করে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে যুক্ত হয়ে যান। ওই শ্রমিক নির্দিষ্ট পোশাকের কোন অংশের কাজ এক ঘণ্টায় কী পরিমাণ করবেন তা আগে থেকেই ইনপুট দেয়া থাকে। কোনো কারণে কাজ বন্ধ থাকলে তা-ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারেন কর্তৃপক্ষ। এমনকি কোন মেশিনে বসে ভুল কাজ ঠিক করছেন কোন শ্রমিক, জানা যাচ্ছে সেই তথ্যও। নতুন এই বিনিয়োগের ফলে প্রায় ২৩০টি পোশাক ও টেক্সটাইল ইউনিটে অন্তত ২ লাখ ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এ লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে, আগামী বছরের মধ্যেই দেশের পোশাক ও বস্ত্র প্রস্তুতকারকরা নতুন প্রযুক্তিতে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন। নতুন এই প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে পোশাক তৈরির অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতিসহ ম্যানমেড (মানবসৃষ্ট) ফাইবার এবং রোবোটিক প্রযুক্তি। এসব উন্নত প্রযুক্তি এই খাতের রপ্তানি পণ্যকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলার পাশাপাশি কারখানাগুলোর সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াবে। একইসঙ্গে, নতুন এই বিনিয়োগের ফলে প্রায় ২৩০টি পোশাক ও টেক্সটাইল ইউনিটে অন্তত ২ লাখ ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, চলতি বছর নতুন কারখানাগুলোর মধ্যে ১৩৭টি বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ), ৬০টি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) এবং ২৭টি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য হয়েছে। এ খাতে কত নতুন বিনিয়োগ এসেছে, তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের খরচ ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে; তবে ভাড়া করা ভবনে ১০ লাইনের কারখানা স্থাপনের সর্বনিম্ন খরচ কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা। এমন তথ্যই দিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। সেই হিসেবে, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র ১৯৭ নতুন সদস্য কারখানা নির্মাণে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বা ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে জানান সংস্থা দুটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া, ১৫টি নতুন টেক্সটাইল ইউনিট স্থাপন এবং আরও ১২টির সম্প্রসারণ কাজে আগেই প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে ম্যানমেড ফাইবার উৎপাদনে। সুতি পোশাকের ক্ষেত্রে, বিশ্ববাজারে ১৬ শতাংশের অংশীদারিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের। ১৭ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন; বিশেষজ্ঞদের মতে, শীঘ্রই চীনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। তবে ম্যানমেড ফাইবার-ভিত্তিক পোশাকের ক্ষেত্রে দেশের অবদান ৫ শতাংশেরও কম। বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, নতুন টেক্সটাইল প্রস্তুতকারকরা এরইমধ্যে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য এলসি খুলতে শুরু করেছে; ২০২৩ সালের মধ্যেই কারখানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রতিটি নতুন পোশাক কারখানায় ৩০০ থেকে ১ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিজিএমইএর নতুন সদস্যদের মধ্যে পাঁচটি বিদেশি কোম্পানি এবং তিনটি যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বলে জানান সংগঠনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য বাজারের দিকেও নজর দিচ্ছে। টিম গ্রুপ, ঊর্মি গ্রুপ, চট্টগ্রামভিত্তিক প্যাসিফিক জিন্স এবং আরডিএম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে কারখানায় নতুন প্রযুক্তি স্থাপনে মনোযোগ দিয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পের বিকাশের জন্য তারা সেন্টার অব ইনোভেশন, দক্ষতা এবং ওএসএইচ খাতে বিনিয়োগ করেছেন। কেন্দ্রটি মেড ইন বাংলাদেশ সপ্তাহে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই কেন্দ্রে উদ্ভাবন ল্যাব, ডিসটেন্স লার্নিং সিস্টেম, ডিসপ্লে, লাইব্রেরি, জাদুঘর এবং ডে কেয়ার সেন্টারের মতো সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কেন্দ্রটি প্রযুক্তির উন্নয়ন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, উন্নত শিল্প সম্পর্ক এবং শ্রমিকদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ব্যবসার মূল বিষয় এবং ডিজিটাল বিপণনের বিষয়েও শেখাবে। দেশের কতটি কারখানায় বিশ্বমানের ডিজাইন স্টুডিও রয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের কাছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ১০০ টিরও বেশি স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের নিজস্ব ডিজাইন এবং উদ্ভাবন কেন্দ্র রয়েছে, এরমধ্যে মধ্যে ২৫টি বিশ্বমানের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নত যন্ত্রপাতি এবং রোবোটিক প্রযুক্তির ব্যবহারও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানা ইতোমধ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের গবেষণা পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবেশ, সামাজ ও প্রশাসনিক খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত