দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূলের পরীক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীর পাশাপাশি অন্য পেশার ব্যক্তিদেরও আইন প্রণেতা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়িক অঙ্গনের পরিচিত অনেকেই। একই সঙ্গে জনসমর্থন নিয়ে এবার অনেক ব্যবসায়ী জাতীয় সংসদে আসছেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পেছনে ফেলে গত রোববার (৭ জানুয়ারি) শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ব্যবসায়িক অঙ্গনের কেউ ধরে রেখেছেন সংসদ সদস্যের ধারাবাহিকতা, কেউ বা আসছেন প্রথমবারের মতো। এর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)। দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে পরপর দুবার মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন শীর্ষ এ ব্যবসায়ী। ১ লাখ ৫০ হাজার ৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত এ ব্যবসায়ী বেক্সিকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি। ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে জয় পেয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একাধিক বারের সভাপতি বেনজীর আহমেদ। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে পঞ্চম বারের মতো বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প, ব্যাংকসহ বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত তিনি। পোশাক খাতে ফেবিয়ান গ্রুপ নামের বড় একটি শিল্প রয়েছে তার। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১০ আসনে পঞ্চম বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে জনশক্তি রপ্তানিসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হোন তিনি। নোয়াখালী-২ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৩ হাজার ৩২৩ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল ও ফুড প্রসেসিং শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তার। নোয়াখালী-৩ আসনে নৌকার টিকিটে হাট্রটিক জয় পেয়েছেন মামুনুর রশিদ কিরণ। ফার্মাসিউটিক্যাল, কোমল পানীয়, বিস্কুট ও কৃষি খাতের প্রতিষ্ঠান গ্লোবের পরিচালক তিনি। খুলনা-৪ আসনে আবারও বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
রংপুর-৪ আসনে ৪৬ হাজার ৪৭২ ভোট পেয়ে আবারও জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং সেপাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। রাজশাহী-৬ আসনে ১ লাখ ১ হাজার ৮২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রেনেসাঁ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার আলম। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্লাস্টিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এর বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। এবারের নির্বাচনে বস্ত্র ও পোশাক খাতের যেসব ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক এ সভাপতি
ফরিদপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা-১৮ আসনে কেটলি প্রতীক নিয়ে ৬৯ হাজার ৮৩১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ খসরু চৌধুরী। নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ’র পরিচালক তিনি। চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। মোট ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।