ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিপুল ব্যয়ে নতুন রাজধানী গড়ছে মিশর

বিপুল ব্যয়ে নতুন রাজধানী গড়ছে মিশর

মিশর। রহস্যঘেরা পিরামিড আর নীলনদের দেশ। প্রচীন সভ্যতার লীলাভুমি এবং রহস্যঘেরা দেশটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত ইতিহাস আর ঐতিহ্য। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত যে দেশটি তার নামই মিশর। আধুনিক যুগে যাকে বলা হয় ইজিপ্ট। প্রায় চার লাখ বর্গমাইল আয়তনের মিশরের রাজধানী কায়রো। মিশর উত্তর আফ্রিকার একটি প্রাচীন রাষ্ট্র। মিশরের অধিকাংশ এলাকা মরুময়। নীল নদ দেশটিকে দুইটি অসমান অংশে ভাগ করেছে। কায়রো দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। বর্তমান মিশর আরবিভাষী মুসলিম রাষ্ট্র হলেও এটি অতীতের খ্রিষ্টান, গ্রিক-রোমান ও প্রাচীন আদিবাসী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এখনো ধরে রেখেছে। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী। আরবি ভাষা মিশরের সরকারি ভাষা। মিশরের জনগণেরর অধিকাংশই আরবি ভাষাতে কথা বলে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই নীল নদ মিশরের জীবনযাত্রায় মূল ভূমিকা পালন করছে। লোকসংখ্যা গড়ে ৮ কোটি।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিশর সরাসরি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ইংরেজিতে ইজিপ্ট বাংলায় মিশর। দেশটি নীলনদ, পিরামিড, ও তাদের রাজা বাদশাদের মমির জন্য বিখ্যাত। মিশরের রাজাদের বলা হত ফেরো। তৎকালীন মিশরের ইতিহাস খ্যাত টলেমি বংশের ছেলে সন্তানদের নামের শেষে ‘টলেমি’ এবং কন্যা সন্তানদের নামের শেষে ‘ক্লিওপেট্রা’ নামটি জুড়ে দেয়া হত। ইতিহাস বিখ্যাত যে ক্লিওপেট্রার নাম আমরা শুনেছি তিনি হলেন মিশর শাসনকারী টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা। ৬৪১ সালে আরব মুসলিম আক্রমণকারীরা মিশর দখল করে। তখন থেকেই মিশর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫ সালের দিকে পারস্য আক্রমণকারীরা মিশর দখল করে ফেলে এবং মেমফিসের উত্তরে ব্যাবিলন অন দ্য নাইল দুর্গ স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই তারা মিশর শাসন করে। এর পর আলেক্সান্ডার দখল করেন মিশর। তার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে স্থাপিত হয় আলেক্সান্দ্রিয়া এবং ব্যাবিলনের গুরুত্ব কমে যায়। বর্তমানে কায়রো থেকে সরিয়ে পূর্ব মরুভূমি অঞ্চলে নতুন করে মিশরের রাজধানী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দেশটি। তবে কেন তারা তাদের দীর্ঘ ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজধানী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পেছনে অবশ্য রয়েছে বেশকিছু কারণ। মিশরের বর্তমান রাজধানী কায়রো পরিচিত অতি জনবহুল দেশ হিসেবে। জায়গা স্বল্পতা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঘনবসতি এবং ক্রমবর্ধমান বাড়িভাড়ার কারণে ২০১৫ সালের মার্চে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। কায়রো বিশ্বের ঘনবসতি শহর হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে কায়রোতে বাস করে প্রায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ। প্রতিবছরই মিশরের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়ছে। মন্ত্রণালয় আর দূতাবাসগুলোকে নতুন রাজধানীতে স্থানান্তরিত করলে যানজট কমবে। মানুষ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে। মিশরের নতুন রাজধানীর নাম দেয়া হয়েছে নিউ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল বা নতুন প্রশাসনিক রাজধানী। মিশর সরকার আশা করছে, প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর এর আয়তন হবে ৭০০ বর্গকিলোমিটার, যা প্রায় সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান। নতুন শহরটি কায়রোর ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে এবং দ্বিতীয় বৃহত্তর কায়রো রিং রোডের ঠিক বাইরে সমুদ্রবন্দর শহর সুয়েজের পাশেই বড় অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত