ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সূচকে উত্থান

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বৈশ্বিক মহামারি-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এ ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতেও। তবে সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংক-ব্যবসায় এবং বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে তিন দফায় ডলারের দর কমেছে এক টাকা। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে বাংলাদেশের টাকার মান বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে। সংস্থাটি মনে করছে, আগামীতে মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানের তুলনায় কমবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি আরো চাঙা হবে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশের অর্থনীতি অন্য উচ্চতায় ছিল। অনেক দেশে সমস্যা হলেও আমাদের নীতি সহায়তার কারণে সেসব সমস্যা হয়নি। সুদের হার ৯ শতাংশ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েননি। কভিড কাটিয়ে অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তখন শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কভিড পরিস্থিতির আগে দেশের অর্থনীতি অন্য উচ্চতায় ছিল। অনেক দেশে সমস্যা হলেও আমাদের নীতি সহায়তার কারণে সেসব সমস্যা হয়নি। সুদের হার ৯ শতাংশ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েননি। কভিড কাটিয়ে অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তখন শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে বিশ্বব্যাপী ডলার বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। সেই ধাক্কাও বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠে। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের যে পরিস্থিতি, তা অন্যান্য মুদ্রার (ডলার) মূল্যের তুলনায় একটু নিচের দিকেই রয়েছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হারও কমে এসেছে। সুতরাং বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে তার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়তে শুরু করায় মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী। এর সঙ্গে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। সামষ্টিক অর্থনীতি বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হার একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে চেষ্টা করা হলেও নির্বাচনের কারণে সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেছে। সরকারের সফলতার জন্য মূল্যস্ফীতি কমানো, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় বেশি জোর দেওয়াসহ ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সংস্কারের দিকে নজর দিচ্ছে সরকার। নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেছে। নীতিনির্ধারণের যে সীমাবদ্ধতা ছিল সেটা এখন আর নেই। এটা অর্থনীতিকে আরো বেগবান করবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনিশ্চয়তা ছিল। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কারণে সেই অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। এরই মধ্যে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কমে এসেছে মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ কেনাকাটার ক্ষেত্রে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হচ্ছে। এছাড়া নানা সংকটের মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৪১ শতাংশ, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সবশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ। নভেম্বরে এটি কমে হয় ৯.৪৯ শতাংশ। গত এপ্রিলে এটি ছিল ৯.২৪ শতাংশ। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে, ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯.৫৮ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, নভেম্বরে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার ছিল ৯.৬২ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে কিছুটা কমে হয়েছে ৯.৪৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে আগের মাসের ১০.৮৬ শতাংশ থেকে কমে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৬৬ শতাংশ হারে। শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার নভেম্বরে ছিল ৯.১৬ শতাংশ, ডিসেম্বরে তা ৯.১৫ শতাংশ হওয়ায় স্থিতিশীল ছিল বলা যায়। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ সামান্য কমার এই ঘটনা খাবারের দামও কিছুটা কমিয়েছে বলে বিবিএসের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ডিসেম্বরে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৯.৪৬ শতাংশ হারে, আগের মাসের ১০.৫৮ শতাংশের চেয়ে যা কমেছে। এদিকে ডিসেম্বরে মজুরির হারও কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বরের ৭.৭২ শতাংশ থেকে যা হয়েছে ৭.৭৪ শতাংশ। নতুন বছরের শুরুতে বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জানুয়ারি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রবাসীরা দৈনিক ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার করে পাঠিয়েছেন। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিন দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৭ কোটি ডলার। আর নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ৭৯ কোটি ৪৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৯১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২২ হাজার ৯৯৬ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ি ২০২৩ সালে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিজিএমইএ জানায়, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বছরভিত্তিক পোশাক রপ্তানি টার্নওভার হিসাব করলে ২০২৩ সাল পোশাক শিল্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট বিবেচনায় বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো করেছে। কারণ, বেশিরভাগ উন্নত দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই করছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন আর্থিক নীতি-সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো ভোক্তাদের চাহিদার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’মহিউদ্দিন রুবেল উল্লেখ করেন, ২০২৪ সাল হবে পোশাক খাতের জন্য একটি পরিবর্তনের বছর। এদিকে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা এবং সম্ভাবনা ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- চলতি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ নামতে পারে। অবশ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। সদ্য বিদায়ি ২০২৩ সালে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন বছর তা বেশ খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে। ২০২৫ সালে সেটি আরো কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত