ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খুলনায় বারি-১৬ জাতের সরিষায় আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক

খুলনায় বারি-১৬ জাতের সরিষায় আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক

খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে লবনাক্ততা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল বারি ১৬ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন চাষিরা। আমন এবং বোরোর মাঝামাঝি সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে এই সরিষার আবাদ করছেন চাষিরা। গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (জিকেবিএসপি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপকুলীয় লবণাক্ত এলাকায় কৃষকদের প্রশিক্ষন এসআরডির মাটি ও সার সহাহিকা এবং বিনামুল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়। কৃষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের দেয়া বারি ১৬ জাতের সরিষা আবাদে আগ্রহী হন। কেন না, আমন ধান কাটার পর বোরো চাষ পর্যন্ত কৃষকদের জমি প্রায় আড়াই হতে তিন মাস পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এই সময় তারা জমিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল বারি ১৬ জাতের সরিষার আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষক। জানা গেছে, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে এর চাষাবাদ করা হয় এবং প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতরে সরিষার বীজে প্রায় ৪০ থেকে ৪৪% তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য। দেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। এ গুলো হলো- টরি, শ্বেত ও রাই। সরিষার জাত বারি-১৬ হাজার বীজের ওজন ৪.৭-৪.৯ গ্রাম। ফসল ১০৫-১১৫ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। আমন ধান কাটার পর বোরো ধান করে না এমন জমিতে এ জাতটি নাবি জাত হিসেবে চাষ করা যায়। বারি-১৬ জাতের সরিষা আবাদ সম্প্রসারনে গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (জিকেবিএসপি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপকূলের প্রকল্পভুক্ত এলাকায় কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল বারি ১৬ জাতের সরিষা আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় লবণাক্ত উপকূলীয় দাকোপ, বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর, ডুমুরিয়ার মাগুরঘোনা, সাতক্ষীরার দেবহাটা ও তালা উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ ও বিনা মূল্যে সার, বারি ১৬ জাতের বীজ এবং মাটি ও সার সহায়িকার পাশাপাশী জমি তৈরি করার খরচ দেয়া হয়। কৃষকদের বিনামুল্যে সার উচ্চ ফলনশীল বাড়ি-১৬ জাতের বীজ সহায়তা দেয়া হয়। কৃষকরা এ সহায়তা পেয়ে জমিতে সরিষা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমন কাটার পরেই বোরো চাষ শুরুর আগ পর্যন্ত অল্প দিনের মধ্যেই বাড়তি ফসল হিসেবে এই লবণাক্ত উচ্চ ফলনশীল বারি ১৬ জাতের সরিষার ফলন পেতে যাচ্ছেন চাষিরা।

বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারাম এলাকার চাষি সুরেন্দ্র এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বারি ১৬ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভুট্টা সহ অন্য আবাদ বাদ দিয়ে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত সরিষার ফলনের আশা আশা করছেন তিনি। ডুমুরিয়ার মাগুরঘোনা এলাকার চাষি মোঃ সমশের আলী এবার ২ বিঘা জমিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল বারি ১৬ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশি থাকায় তাঁর উৎপাদিত জমির সরিষা মাড়াই করে তিনি নিজেই ব্যবসা করবেন। স্বল্প চাষ, কম খরচে সাময়িক সময়ে পরিত্যক্ত থাকা চাষের জমিতে বরি ১৬ জাতের সরিষা চাষে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে জিকেবিএসপি (১ম সংশোধনী) প্রকল্পভুক্ত উপজেলার কৃষকদের। কৃষকরা গত বছরের তুলনায় এবারে ২৫০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন সরিষা চাষিরা। দেবহাটার কৃষক কামরুল শেখ বলেন, জিকেবিএসপি প্রকল্পের ইউনিয়ন ভিত্তিক সার সহায়িকা প্রয়োগ করে জমিতে বারী-১৬ জাতের সরিষা চাষ করেছি। ক্ষেতে ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারব। তালার কৃষক বাবু অনাথ চন্দ্র রায় জানান, আমন ধানকাটার পর বোরো চাষ পর্যন্ত কৃষকদের জমি প্রায় আড়াই হতে তিন মাস পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। দেড় বিঘা জমিতে বারী-১৬ জাতের সরিষা চাষ করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সরিষা কেটে ফসল ঘরে তুলব। ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করব। এবারে তুলনামূলকভাবে সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। তেমন একটা রোগ বালাই দেখা দেয়নি। ফসল ঘরে তুলতে পারলেই লাভবান হব।

গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (জিকেবিএসপি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, সরিষা দেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বিভিন্ন জাতরে সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য। দেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। এগুলো হলো- টরি, শ্বেত ও রাই। সরিষার জাত বারি-১৬ হাজার বীজের ওজন ৪.৭-৪.৯ গ্রাম। ফসল ১০৫-১১৫ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। জিকেবিএসপি (১ম সংশোধনী) প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সব সময় কৃষকদের মাটি পরীক্ষা, সার সহায়িকা দিয়ে সঙ্গে আছি। শুধু বারি ১৬ জাতের সরিষা নয় আমরা নিয়মিত শীতকালীন সবজি চাষে তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় কৃষকদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। আমাদের প্রকল্প থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশী বিনা মূল্যে বীজ, সার এবং মাটি ও সার সহায়িকা দিয়ে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা হচ্ছে। কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লবণাক্ত খুলনা উপকূল এলাকার কৃষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত