এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত

আরো দুই মাস চলতে পারে গ্যাসসংকট

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আরো দুই মাস স্থায়ী হতে পারে দেশে গ্যাস সরবরাহের সংকট। এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে দেশে গ্যাস সরবরাহের সংকট হবে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) কর্মকর্তারা। তারা জানান, এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে বলে গ্যাস সরবরাহ কম। দুটি পাইপলাইনের একটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ গত নভেম্বরে শুরু হয়। এটির কমিশনিং হওয়ার কথা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণকৃত এই লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে অন্যটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে। সেটি সম্পন্ন হতে দুই মাস সময় লাগবে বলে জানা কর্মকর্তারা। নভেম্বর থেকে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলসহ বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কারখানার মালিকরা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। দুটি পাইপলাইন দিয়ে এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত না হলে আগামী মার্চ বা এপ্রিলের আগে গ্যাস-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, এলএনজি আমদানি করতে হয় স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে। ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে এলএনজি আমদানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। কিন্তু এখন এলএনজি টার্মিনালে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র গ্যাস সংকটের মুখে পড়েছে, যার ফলে পোশাক, সিরামিক, সিমেন্ট, ইস্পাতসহ বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের চাপের তারতম্যের কারণে কারখানার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে শিডিউলভিত্তিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারে। এতে কারখানা মালিকদের বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কারখানা চালুর প্রস্তুতি থাকবে। তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় ডায়িং এবং ফিনিশিং খাতে শিডিউল ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারখানাগুলো সময়মতো ফেব্রিক পাচ্ছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এমনিতেই তৈরি পোশাক শিল্প সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার ঘটনা। এর মধ্যে গ্যাস সংকট এই পরিস্থিতিকে আরও উসকে দিচ্ছে। আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) মো. শাহ আলম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ থাকলেও জানুয়ারিতে এই সরবরাহ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এখন গ্যাসের সরবরাহ ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকলে টেক্সটাইল কারখানায় রঙের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আবার বিকল্প জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। ‘উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শিপমেন্ট শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’