ব্যবসায়িক হিসেবে প্রবেশাধিকার চালু করেছে এনবিআর
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া ঠেকাতে- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোম্পানির অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের সাথে ‘ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস)’ যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের আওতায়, পরীক্ষামূলকভাবে দুটি সিমেন্ট কোম্পানির অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়েছে এনবিআর। মার্চে তাদের সাথে পুরো মাত্রায় সংযোগ চালু করবে ভ্যাট বিভাগ; এবং আরো কোম্পানিকে এই সফটওয়্যারের আওতায় আনা হবে। এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে, এলটিইউ ভ্যাট হিসেবে পরিচিত এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট- ১১১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চেয়েছিল, কিন্তু তখন ব্যবসায়ীদের ব্যাপক বিরোধীতার মুখে এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসে। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু কিছু কোম্পানি সফটওয়্যারে হিসাব রাখলেও ভ্যাট বিভাগের কাছে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না।
এ ধরণের কিছু কোম্পানির অনিয়ম ইতিমধ্যে এনবিআর উদঘাটনও করেছে। ২০১৯ সালে দেওয়া এক আদেশে, বার্ষিক ৫ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য এনবিআর নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৫০টি কোম্পানি ব্যবহার করলেও-৫ কোটি টাকার উপরে টার্নওভার থাকা বেশিরভাগ কোম্পানিই এখনো এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে না। তবে কতসংখ্যক কোম্পানি সফটওয়্যার ব্যবহার করার শর্ত পরিপালন করছে না, এমন তথ্য এনবিআরের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। অবশ্য যেসব প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, এনবিআরের আদায়কৃত ভ্যাটের অর্ধেকের বেশি তাদের কাছ থেকে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। আবার যারা নিজস্ব অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তাদের একটি অংশের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো জানায়, ২০২২ সালে তিনটি সিমেন্ট কোম্পানির হিসাব পরীক্ষা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ এলটিইউ-ভ্যাট অফিস উদ্ঘাটন করেছে। সেখানে ভ্যাট অফিসে একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক হিসাব রাখার তথ্য পেয়েছিল ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। অবশ্য অন্য কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, কারো অনিয়মের জন্য সবাইকে সমানভাবে বিবেচনা করা যৌক্তিক নয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কোম্পানির সফটওয়্যারে সার্বক্ষণিক প্রবেশাধিকার পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। প্রত্যেকটি কোম্পানির বিজনেস পলিসি থাকে।
এটি ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে- আমাদের বিজনেস পলিসি বা গোপনীয়তা প্রতিযোগীদের কাছে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’ অবশ্য বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, ‘এনবিআর যেভাবে তথ্য নিতে চাচ্ছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’ কোম্পানিগুলোর হিসাব ব্যবস্থা ও ভ্যাট প্রদানে স্বচ্ছতা আনতে হলে সংযুক্তকরণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন। তবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে, এনবিআরের সিস্টেমটিকে আপডেটেড করতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজনেস সিক্রেটগুলো বেহাত না হয়।’ ‘আর কেবল ১৫৫টি প্রতিষ্ঠান নয়, যত প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ব্যবহার করার কথা, তাদের সবাইকে এর আওতায় আনতে হবে। যাতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হয়। অন্যথায় এ উদ্যোগ সফল হবে না’- বলেন তিনি। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ১৫০টির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এনবিআর নির্ধারিত অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, আগামী মাসের মধ্যেই আমরা তাদের সকলের সাথে সংযোগ স্থাপন করব।’