ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আরো ২৩ কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস উঠল

আরো ২৩ কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস উঠল

আরো ২৩ প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দামের সীমা) তুলে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর ফলে এখন আর মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠানের ওপর ফ্লোর প্রাইস থাকল। গতকাল সোমবার বিএসইসি থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। মঙ্গলবার (আজ) (২৩ জানুয়ারি) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩৫ প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে বাকিগুলোর ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয় বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত রোববার শেয়ারবাজারে বড় দরতপন হয়। তবে, পরের কার্যদিবসেই অর্থাৎ গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এদিন দাম বাড়ার তালিকায় ২০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লেখানোর পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদন হয়েছে। প্রথম ধাপের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে এমন ইতিবাচক প্রভাব পড়ায় সোমবারই দ্বিতীয় দফায় আরো ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলো পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

যে ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলো-

শেয়ারবাজারের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলেও ৩৫ প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর প্রাইস রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ ৩৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বারাকা পাওয়ার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডরিন পাওয়ার, ইনভয় টেক্সটাইল, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স এগ্রো, কেডিএস লিমিটেড, কাট্টালী টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, পদ্মা অয়েল, সায়হাম কটন, শাসা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাহিনপুকুর সিরামিকস, সামিট পাওয়ার এবং ইউনাইটেড পাওয়ার।

যে ১২ প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর প্রাইস থাকবে

আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, বেক্সিমকো, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মা, রেনেটা, রবি ও শাহজিবাজার পাওয়ার। শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে, গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথমবার ২০২০ সালে মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এ পর্যায়ে শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিচ্ছে কমিশন।

পতনের পরের দিনই রেকর্ড পুঁজিবাজারে

প্রায় দেড় বছর পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর অস্বাভাবিক বিক্রির চাপে গত রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে এক কার্যদিবস পরই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক শেয়ারবাজারে। গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে ডিএসইতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বাজারটিতে ছয় মাস পর আবার হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে সবকিছু ইতিবাচক থাকলেও সিএসইতে মূল্যসূচক কমেছে। অবশ্য সূচক কমলেও এই বাজারটিতেও লেনদেনের গতি বেড়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার বিকালে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩৫ প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর প্রাইস রেখে বাকি সব প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে রোববার লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২১৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ দিকে বিক্রির চাপ কমায় প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। এ পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬ পয়েন্ট কমে যায়। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। দরপতনের তালিকা থেকে বেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের প্রথম কয়েক মিনিট বাদে লেনদেনের প্রায় পুরো সময় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। এমনকি দফায় দফায় দাম বেড়ে আট প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। এমনকি লেনদেনের বেশিরভাগ সময় দিনের সর্বোচ্চ দামে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের বিপুল ক্রয় আদেশ এলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

অবশ্য এমন ইতিবাচক বাজারেও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ে। ক্রেতা সংকট থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমেছে। এমনকি লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুল পরিমাণ বিক্রির আদেশ আসে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকে ক্রয় আদেশর ঘর। দিনের লেনদেন শেষে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২টিতে। অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটের মধ্যে পড়লেও দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৫টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯টির শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততোটাই বেড়েছে। এছাড়া ২ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ১২৯টির। এর মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত