দীর্ঘ অপেক্ষার ইতি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিজ’ যাত্রা শুরু করল। শনিবার সূর্যাস্তের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। টাইটানিকের চেয়েও পাঁচ গুণ বড় এই প্রমোদতরী যেন সাগরের অন্তহীন নীলের মাঝে আস্ত এক মায়া নগরী। এতে আছে বিনোদনের এক অনন্য জগত। কী কী বৈশিষ্ট্য এই প্রমোদতরীর? স্থানীয় সময় গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছে জাহাজটি। গন্তব্য হল পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। প্রমোদতরীটি সাত দিনের সমুদ্রযাত্রার পর গন্তব্যে পৌঁছবে। এই প্রমোদতরী টাইটানিকের চেয়েও পাঁচ গুন বড়। অন্তহীন নীলের মাঝে যেন আস্ত এক মায়ানগরী। বিনোদনের অন্য এক দুনিয়ায় মোড়া। বিলাসিতার চোখ ধাঁধানো ঝলক এই প্রমোদতরীতে। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ছিল রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের ‘ওয়ান্ডার অফ দ্য় সিজ’। সেটিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী হলো আইকন অব দ্য সিজ। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ ছিল ১ হাজার ১৮৮ ফুট দীর্ঘ, আর ওজন ছিল ২৩৫, ৬০০ টন। দৈর্ঘ্য : আইকন অফ দ্য সিজ-এর দৈর্ঘ্য ৩৬৫ মিটার (১, ১৯৭ ফুট)। ওজন: ওজন ২, ৫০, ৮০০ টন। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে বড় ক্রুজ শিপ ছিল ‘ওয়ান্ডার অফ দ্য সিস’। এই ক্রুজ জাহাজে রয়েছে ২০টি ডেক, রয়েছে ৭টি সুইমিং পুল এবং ৬টি ওয়াটার স্লাইড। প্রমোদতরীটির সবচেয়ে উপরের ডেকে রয়েছে ৪০টির বেশি বার। আছে রেস্তোরাঁ, উঞ্জ এবং বিনোদোনস্থল। ৫, ৬১০ জন যাত্রী এবং ২, ৩৫০ জন ক্রু সদস্য - সব মিলিয়ে ৭, ৯৬০ জন লোক এই বিশাল জাহাজে যাত্রা করতে পারবে। যাত্রা শুরুর পর, যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ‘রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থা। জাহাজটিতে ২৮টি বিভিন্ন ধরনের কেবিন থাকছে। ৮২ শতাংশ কক্ষে তিন বা তার বেশি অতিথি থাকতে পারবেন। এ প্রমোদতরীতে রয়েছে ‘থ্রিল আইল্যান্ড’-নামে বিশালাকার ওয়াটার পার্কও। রয়েছে সার্ফসাইড’ নামে একটি পারবারিক এলাক। ‘রয়্যাল প্রমেনেড’ থেকে সরাসরি সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যাবে। এছাড়াও রয়েছে ‘দ্য হাইডওয়ে’তে ইনফিনিটি পুল। কেবিন: একাধিক ধরনের কেবিন রয়েছে এই প্রমোদতরী তথা আইকন অফ দ্য সিজে। ৭০ শতাংশ কক্ষের সঙ্গে বারান্দা রয়েছে। এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে সমুদ্রের নীল সৌন্দর্য। যাত্রীদের বিনোদনের জন্য ৫০ জন সঙ্গীতশিল্পী ও কমেডিয়ানও রয়েছেন। এই প্রমোদতরীটি রয়্যাল ক্যারিবিয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন। ২০২২-এর এপ্রিলে, ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে জাহাজটি তৈরি করা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে শুরু হয় ট্রায়ার রান। সেই পরীক্ষায় কয়েকশো মাইল পথ ভ্রমণ করেছে আইকন অব দ্য সিজ। গত বছরের দিকে শেষ হয় ট্রায়াল রান। প্রমোদতরীটির সামনের দিকে আছে ‘অ্যাকোয়াডোম’। এখানে জলপ্রপাত দেখার সুযোগ মিলবে। এছাড়াও পাঁচ ডেক উঁচু ও খোলা সেন্ট্রাল পার্ক। সেখানে রয়েছে প্রচুর গাছপালা ও সাঁতারুর ভাস্কর্য। এই প্রমোদতরী চলছে মায়ামি থেকে পশ্চিম ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত। এক সপ্তাহের সফর করবে ক্যারিবিয়ান সাগরের পূর্ব ও পশ্চিম পথ ধরে। এই সাত রাতের মধ্যে এক রাতে অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হবে বাহামায় রয়্যাল ক্যারিবিয়ান সংস্থার একটি দ্বীপে। সাত রাতে ইস্টার্ন ক্য়ারিবিয়ান এই সফরে বেশ কয়েকটি জায়গা ভ্রমণের সুযোগ মিলবে। ৭ রাতের ইস্টার্ন ক্যারিবিয়ান ট্রিপে মায়ামি, ফিলিপ্সবার্গ, শার্লট আমালি এবং কোকোকে; অথবা, ব্যাসেটেরে, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, শার্লট আমালি এবং কোকোকে ভ্রমণ করা যাবে। আর ৭ রাতের পশ্চিম ক্যারিবিয়ান ট্রিপে থাকবে মায়ামি, রোটান, কোস্টা মায়া, কোজুমেল এবং কোকোকে ভ্রমণ। রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালস এর ওয়েবসাইটের তথ্যমতে চলতি বছরের শুরুতে প্রমোদতরীটির প্রথম যাত্রায় জনপ্রতি খরচের রেঞ্জ হল প্রায় ১৮০০ ডলার থেকে ২২০০ ডলারের কাছোছি, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা থেকে এক লাখ ৮৩ হাজার টাকা। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে দ্য় আইকন অফ দ্য সিজ-এর টিকিট বুকিং শুরু হয়। তখন মাথাপিছু টিকিটের দাম ছিল ১২৫৯ ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা।