ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গড়ে উঠবে ‘সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা’

গড়ে উঠবে ‘সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা’

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার। এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ সরকার। আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনি ইশতেহারে ১২টি অগ্রাধিকারের শীর্ষে ছিল নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। অথচ গত কয়েক দিনে চাল, আটা, ময়দা, মাংসসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বছরের শুরুতেই যদি চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম আবার বাড়তে থাকে, মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের পুরোটা সময়ই সীমিত আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ ছিলেন। এ অবস্থায় নতুন করে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরো নাজুক অবস্থানে চলে যাবেন। নির্বাচনের পর হঠাৎ গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক নয়। গত কয়েক মাসে ৬০০–৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। মাংস ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ৭০০ টাকার কমে বিক্রি করলে তাদের পোষাচ্ছে না। গরুর মাংসের দাম বাড়লে মুরগি, খাসির মাংস ও মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ দাম বাড়বে। আটা-ময়দার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার-সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। কিন্তু চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চার-পাঁচ টাকা বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এ ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের, আড়তদাররা মিলমালিকদের দোহাই দিচ্ছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।’ এই কিছু মহলকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার?

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে এগোচ্ছে সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যতগুলো খাত আছে, সবাই একত্র হয়ে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। নতুন সরকারের প্রথম কেবিনেট সভায় প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ শুরু করছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বাজার নিয়ন্ত্রণে সবাইকে অবদান রাখা, সবার ভূমিকা থাকা ও উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, ‘দেশের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং যাতে সহজলভ্য হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা’। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনের কারসাজিতে কিছু জিনিসের দামের ব্যত্যয় ঘটেছে; সেটা যাতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা আলোচনা করতেই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে মোতাবেক কাজও শুরু হয়ে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, অত্যাবশ্যকীয় আটটি নিত্যপণ্য আমদানিতে এরই মধ্যে মার্জিন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরো নির্দেশনা দেওয়া হবে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এরপরও কিছু মজুতদার চেষ্টা করে কীভাবে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়। বাজার অর্থনীতিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটবেই। কেউ কেউ হয়তো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। যেভাবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা যায়, ঠিক সে কাজগুলোই সরকার করছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। আরও জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এ মুহূর্তে চিনিসহ যেসব পণ্যের দাম বেশি রয়েছে, সেগুলোর আমদানি শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে এসব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দাম সহনীয় রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ডলার ছাড়া ভারত ও চীনের মুদ্রায় পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে সরকারের হাতে। এসব পদ্ধতিতে পণ্য আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনও ধরনের জটিলতায় না পড়েন, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিং কার্যক্রম বাড়াবে। এভাবেই গড়ে উঠবে সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে যার যেখানে ভূমিকা রয়েছে, সেখান থেকেই অবদান রাখতে হবে, ভূমিকা থাকতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই গড়ে তোলা যাবে সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই এখন থেকে কোনো একক মন্ত্রণালয় নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে তারা। সভা সূত্র জানায়, শুধু নিয়ন্ত্রণই নয়, বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতেও কাজ করবে আন্তঃমন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে বাজার-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অপরাপর যেকোনো মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হবে। সরকার মনে করে, মানুষের বুকে চাকু মেরে অধিক মুনাফা আর নয়। এ ক্ষেত্রে বাজার বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় যে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- এক. আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেশি, সেগুলোর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা, দুই. ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ডলার সহায়তা দেওয়া, তিন. ডলারের সংকট হলে বিকল্প মুদ্রায় পণ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া এবং চার. দেশে উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম সহনীয় রাখার পাশাপাশি মজুতদারি করে কোনও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা বাজার অস্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা কঠোরভাবে দমন করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত