ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্রুত এগোচ্ছে চার মেগা প্রকল্প

স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার বেড়েছে
দ্রুত এগোচ্ছে চার মেগা প্রকল্প

সরকার আমদানির পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে প্রায় এক ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেমন, ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য কমপক্ষে ১০টি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট, ইস্পাত ও পেইন্টের মতো উপকরণ সরবরাহ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা উপকরণ যদি কোনোভাবে নিম্নমানের হয়, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির পথ বেছে নেবে। সেই হিসেবে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের একটি বড় অংশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।

মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু ছাড়া বাকিগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। অগ্রগতির দিক থেকে পদ্মার পরই এগিয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৯২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পের। আর পদ্মা রেল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ। তবে মেট্রোরেল চালু হলেও কিছু কাজ বাকি আছে এখনো। এই প্রকল্পের ১৫ শতাংশ কাজ বাকি আছে। ৮২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের। তবে সবেচেয়ে পিছিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ (ডিসেম্বর) প্রতিবেদনে এই অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখভাল করছেন। তা কার্যকর করতে চলমান সংকটেও সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আট মেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত। অনেক প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট হলেও এগুলোর ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে বেশি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে শুরু হয়ে মেট্রো রেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্তও খুলে দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধন করে সর্বশেষ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : পদ্মা সেতুর পরই বেশি অগ্রগতি হয়েছে এই প্রকল্পের। এটি ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : ২০১৫ সালে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে এ প্রকল্পটি। এটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৪০ শতাংশে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ : এটি প্রথমে ২০১০ সালে সিঙ্গেল লাইনে শুরু হলেও পরে সংশোধন করে ডাবল লাইন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এটির অগ্রগতি হয়েছে ৯২ শতাংশ। এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে জুনে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প : ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে এর কাজ। মাঝে সংশোধন করে সর্বশেষ এর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে পুরো কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত কার্যক্রম : ২০১৪ সালে শুরু করে এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। এটি ২০২৬ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : ২০১৬ সালে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের কাজে অংশ নেওয়া ১০ দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি সিমেন্ট, ২টি ইস্পাত ও বাকিগুলোরা পেইন্ট ও পিভিসি পণ্য তৈরি করে। সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে শাহ সিমেন্ট লিমিটেড, ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সেভেন সার্কেল (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড। বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাত এই প্রকল্পে ইস্পাত সরবরাহ করছে এবং আরএফএল গ্রুপের ২ প্রতিষ্ঠান- আরএফএল পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস ও রেইনবো পেইন্টস প্রয়োজনীয় পাইপ ও রোড মার্কিং উপকরণ সরবরাহ করছে। স্থানীয় সিমেন্ট নির্মাতারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৫৮ লাখ টনে উন্নীত করেছে। মাত্র ১০ বছর আগে এই খাতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ টন। প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন, এছাড়া, এটি রপ্তানির পথ খুলে দেয়। স্থানীয় সরবরাহকারী ও আন্তর্জাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করে। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণ পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং বড় বড় প্রকল্পের কল্যাণে দেশের ইস্পাতশিল্প শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট ইস্পাত ব্যবহারের ৪০ শতাংশ সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে ইস্পাতের মোট ব্যবহার ছিল প্রায় ৮০ লাখ টন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত