রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহে ধস নেমেছে। বিশেষ করে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণ ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে। ফলে জরুরী পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার নিতে হচ্ছে। ফলে ডলারের বাজার অস্থিরতা দেখা দেয়। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মানতে গিয়ে বিপাকে আছেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ছয় মাসে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৯৭৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এসেছে ২৪৪ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জানুয়ারিতে সার্বিক রেমট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে কমেছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার, যা শতকরা হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার বাজারের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কয়েকটি ব্যাংক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এসব ব্যাংক ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স কিনছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ঘোষিত দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। তাই প্রত্যাশিতভাবেই ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে বিডিবিএল ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অগ্রণী ব্যাংকে। দীর্ঘদিন এ ব্যাংকটির অবস্থান সার্বিক খাতে শীর্ষ তিনে ছিল। একসময় ব্যাংকটি রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রথম স্থানে ছিল। কিন্তু ডলার বাজার উত্তপ্ত হওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অগ্রণী ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৩ মিলিয়ন ডলার। আর গত জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৬৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ব্যাংকটির রেমিট্যান্স অর্ধেকে নেমেছে। আগের ৩ মাসে এটি ৫০ মিলিয়নের ঘরে ছিল। গত জুলাইয়ে জনতা ব্যাংকে এসছে ৬৩ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটিতে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। গত মাসে এসেছে ৭৫ মিলিয়ন ডলার। রূপালী ব্যাংকে এমনিতেই রেমিট্যান্স কম আসে। বর্তমানে আরও কমে গেছে। জুলাইয়ে ১১ মিলিয়ন আসলেও জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলার। সরকারি পণ্য আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সোনালি ব্যাংকের রেমিট্যান্সেও পতন হয়েছে। গত জুলাইয়ে আসা ৪৫ মিলিয়ন জানুয়ারিতে নেমেছে ২৫ মিলিয়নে।