১০ বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিয়ান স্ট্যালিন
পাট আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটবীজ বপনের পর প্রায় তিন থেকে চার মাস পর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটতে হয়। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে বাজারজাত করার এই দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যায়বহুল পদ্ধতির কারণেই পাট উৎপাদনে অনীহা কৃষকদের। তবে সব থেকে বেশি ভোগান্তি হয় পাট কাটার পর তা জাগ দেয়ায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস তবুও যেন গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর পুকুর, খাল, বিলে পানির অভাব। আর এতেই বিপাকে কৃষক। পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না পাট। সোনালি আঁশের দেশ বাংলাদেশ। একসময় বিশ্ব দরবারে সোনালি আঁশখ্যাত এই পাট দেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও আজ অনেকটা ক্ষতির মুখে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় (যেমন বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি) আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। তবে কৃষিমন্ত্রী শোনালেন একটি ভালো সংবাদ। সরকারের পাটবান্ধব নীতির কারণে গত ১০ বছরে দেশে এর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল। এর পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। এরই মধ্যে জিওটেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‘পাট গবেষণায় জিনোম সেন্টারের সাফল্য ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পাটবান্ধব নীতির কল্যাণে বি গত ১০ বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল। ২০১৫ সালে যেখানে ৫১ লাখ বেল পাট উৎপাদন হতো, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ বেল। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ লাখ বেল পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য ২০০৯ সালে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের কার্যক্রম শুরু করান এবং জিনোম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে ২০১০ সালে বিশ্বে সর্বপ্রথম পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে দেশে চাষোপযোগী উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর দেশের মাটিও পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কাজেই পাটের উৎপাদন বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, পাটের উৎপাদন আরও বাড়াতে উচ্চফলনশীল জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণায় আরো মনোযোগী হতে হবে এবং জিনোম সিকুয়েন্সিং ল্যাবের পুরোপুরি ব্যবহারে আপনাদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। চাহিদার সিংহভাগ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। সেজন্য, পাটবীজের আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে, পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং কম জমিতে অধিক পরিমাণ পাট উৎপাদনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার। মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জিওটেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বজুড়ে নানা কাজে ‘মেটাল নেটিং’ বা পলিমার থেকে তৈরি সিনথেটিক জিওটেক্সটাইলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও উৎকৃষ্ট জুট জিওটেক্সটাইলের কদর বাড়ছে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে পাটকাঠির কালো ছাই বর্তমানে চীন, তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলে রপ্তানি হচ্ছে।
যত্রতত্র বসতবাড়ি গড়ে তোলায় ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে অনেক খাল, বিল, পুকুর। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোও হারিয়েছে নাব্যতা। যদিও নদীর পানিতে পাটের রং কিছুটা বজায় থাকে। তবে কৃষি জমি থেকে নদী দূরে হওয়ায় পরিবহন খরচ বেশি। ফলে পানির অভাবে এক চরম দুর্ভোগে পাটচাষিরা। আর এতেই ব্যাহত হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার পাট উৎপাদন। অল্প পানিতে অধিক পরিমাণে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং হচ্ছে কালো বা ফ্যাকাশে। পচে যাচ্ছে পানিও। এসব নিম্নমানের পাট বিক্রি করে ক্ষতির মুখে চাষিরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভালো দাম পাওয়ায় তিন বছর ধরে রাজশাহীতে পাট চাষ বেড়েছে। জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় পাট চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই দুই উপজেলাতেই এবার পানিসংকটও বেশি দেখা দেয়। এ কারণে চাষিরা জমি থেকেই পাট বিক্রি করে দেন। ফলে রাতারাতি পাট নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীর উদ্ভব হয়। তাঁরা সরাসরি জমি থেকে পাট কিনে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পচিয়ে বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই নতুন ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী হয়েছেন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভালো দাম পাওয়ায় ৩ বছর ধরে রাজশাহীতে পাট চাষ বেড়েছে। জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় পাট চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই দুই উপজেলাতেই এবার পানি সংকটও বেশি দেখা দেয়। এ কারণে চাষিরা জমি থেকেই পাট বিক্রি করে দেন। ফলে রাতারাতি পাট নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীর উদ্ভব হয়। তাঁরা সরাসরি জমি থেকে পাট কিনে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পচিয়ে বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই নতুন ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী হয়েছেন। বানেশ্বর বাজারে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পানি সংকটের কারণে পাটের মান এবার খারাপ হয়েছে। ফরিদপুরে উৎকৃষ্ট মানের পাটের মণ ২ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতি বছর তিনি ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ মণ পাট কেনেন।