দেশে অগ্নিনির্বাপক পণ্যের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এসব পণ্য দেশেই উৎপাদন করা গেলে সেটি আমাদের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। তাই দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফায়ার সেফটি প্রোডাক্ট যৌথভাবে উৎপাদনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৯ম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান তিনি। অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে এনে দেশে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার, অগ্নি-সুরক্ষা নিশ্চিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে সব মহলে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস নিয়ে তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)। এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। সালমান এফ রহমান বলেন, বেসরকারি খাত এবং সরকার যখনই একসাথে কাজ করে আমরা সেসব কাজে সফলতা পেয়েছি। অগ্নি নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গার্মেন্টে অগ্নি দুর্ঘটনা বিষয়ে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টে অগ্নি দুর্ঘটনার পর প্রধনামন্ত্রী অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিল্প কারখানাগুলো ফায়ার সেফটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আজকে কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর বেশিরভাগই এখন বাংলাদেশে। অগ্নি নিরাপত্তা দিতে সরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের যতগুলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ফায়ার স্টেশন রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং দুর্ঘটনার আগে যে রোধ করার জন্য যেসব লাগে তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। শিল্প কারখানাগুলোতে আমরা পরিদর্শন করেছি। বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। বৈদ্যুতিক তার উন্নত মানের ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রিভেন্টিভ কাজগুলো রেগুলেটরি অথরিটির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করব। বিএসটিআইকে শক্তিশালী ও ফায়ার সায়েন্স ল্যাবরেটরি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানান তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসাবের সভাপতি নিয়াজ আলী চিশতি। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। ইসাবের সভাপতি নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার যত বড় হচ্ছে, অগ্নিঝুঁকির নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে এনে দেশে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার এখন সময়ের দাবি। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময় ছিলো ৭০ মিলিয়ন, এখন সেটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। কল কারখানাকে আধুনিক করতে হবে। এক্ষেত্রে সেফটি সিকিউরিটির কোন বিকল্প নেই। ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে বিজনেস কমিউনিটিকে এগিয়ে আসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ফায়ার সেফটির জন্য অনেক সময় কেউ কেউ নিম্নমাণের অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। এগুলো দেশের শিল্প, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অগ্নি সুরক্ষা নিশ্চিতে মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সবুজ শিল্পায়ন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। যার ফলে মোট ২০৭টি গ্রিন সার্টিফাইড তৈরি পোশাক কারখানা বাংলাদেশে রয়েছে। বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ তৈরি পোশাক কারখানার বেশিরভাগই রয়েছে বাংলাদেশে। দেশেই ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশেই ফায়ার সেফটি সঞ্জাম উৎপাদন ফলে মূল্য সময় এবং কোয়ালিটি সবদিক থেকেই ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কারখানা মালিকরা কাজ করছে। পোশাক শিল্পের নিরাপদ ধরে রাখতে বিজিএমইএ এবং ইসাব একসাথে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, বিএসপি(বার), এনডিসি, বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্মাণ ব্যয়ের ২ শতাংশ ফায়ার সেফটি নিশ্চিতে খরচের জন্য আহ্বান জানান তিনি। ফায়ার সায়েন্স ল্যাব স্থাপনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং সংশ্লিস্টদের সহযোগিতা চান তিনি। প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৩০টি দেশের শতাধিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছ। এতে ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির অত্যাধুনিক পণ্যগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনটি ক্যাটাগরিতে পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে- ফায়ার সেফটি সলিউশন, সিকিউরিটি সলিউশন ও বিল্ডিং অটোমেশন।