‘এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্যের বহুমুখীকরণ অপরিহার্য’

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে, রপ্তানি খাতে তত বেশি সাফল্য আসবে, সেই সঙ্গে শুল্ক হার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হয়, তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই বলে মতপ্রকাশ করেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব মতপ্রকাশ করেন। সেমিনারের সঞ্চালনায় ডিসিসিআই সভাপতি রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার উপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময়ে নেই, সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে, তবে বেসরকারি খাত সামনের দিনগুলোতে একটি টেকসই দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমণ্ডএর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে, তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জগুলো মধ্যে অন্যতম বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়নো, খেলাপিঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। বাণিজ্যবিষয়ক লজিস্টিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যার উত্তরণ অপরিহার্য, সেই সঙ্গে শিল্প খাতের ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা নিরিখে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি, এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নির্ধারণের আরো সচেতন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ প্রদান করেন। সর্বোপরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডসমূহে সব ধরনের সেবা প্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। এতে বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদান প্রত্যাহার করা হলো, যদি এ খাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এমতাবস্থায়, তিনি এ খাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কীভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারণের উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মতো শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকাণ্ডপ্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে।