বইমেলায় অডিওবুক আর ই-বুকে বিক্রি বাড়ছে
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বইমেলায় রয়েছে অডিওবুক ও ই-বুকের স্টলও। কাগুজে বইয়ের স্টলের পাশাপাশি সেগুলো নিয়ে মানুষের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। চলছে অমর একুশে বইমেলা। বাহারি সাজে সেজেছে মেলাপ্রাঙ্গন। স্টলগুলো যেন নেমেছে নান্দনিকতার প্রতিযোগিতায়! অভিনব সব স্টলে ঘুরতে ঘুরতে একটির সামনে এসে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়। এ কী! বইমেলায় স্টল, অথচ নেই কোনো বই। দোকানটির কাছে যেতেই অবশ্য পরিষ্কার হলো সব। ‘কাহিনীক’ নামক এই স্টলটি আসলে একটি অডিওবই স্টল। একই নামে তাদের রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন। তাতে রয়েছে জনপ্রিয় সব বইয়ের অডিও রেকর্ডিং শোনার ব্যবস্থা। শুধু ‘কাহিনীক’ নয়, বেশ কয়েকটি অডিওবুক আর ই-বুক স্টল দারুণ সাড়া ফেলেছে এবারের বইমেলায়। মেলায় আগত পাঠক-পাঠিকারাও সাগ্রহে ভিড় করছেন এসব স্টলে। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি তুমুল বিক্রি হচ্ছে এসব ডিজিটাল বই। অনেকের কাছে এখনো বই মানেই কাগজে ছাপা অক্ষর, হাতে নিয়ে স্পর্শ করে পড়ার জিনিস। যদিও কাগজের বই অনেক আগেই ঢুকে পড়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। অল্পদিনে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তাও পেয়েছে মাধ্যমটি। এ জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এবারের বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে স্টল দিয়েছে বেশ কয়কটি অ্যাপভিত্তিক বইয়ের দোকান। কোনোটি ই-বুক, কোনোটি অডিওবুক, কোনটিতে রয়েছে দুই ধরনেরই পণ্য। ‘শুনবই’ যেমন শুধুই অডিও বইয়ের স্টল। একই নামে অ্যাপ রয়েছে তাদের। অ্যাপটি সমৃদ্ধ এক হাজারের বেশি বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থে। এই প্লাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হৃদয়। তার হাত ধরে ২০২১ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘শুনবই’। প্রতিষ্ঠানটির ব্রান্ড প্রমোটার জান্নাতুল ফেরদৌস জানালেন, গত বছর প্রথমবারের মতো মেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। এবার তাদের স্টল পড়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাংলা একাডেমির মেলায় অংশগ্রহণ করতে কোনো সমস্যা পোহাতে হয়নি তাদের। ‘শুনবই’ অ্যাপটিতে অডিওবই শুনতে সাবস্ক্রাইব করতে হয় শ্রোতাদের। রয়েছে মাসিক ও বার্ষিক প্ল্যান। প্রতি মাসে ৯৯ এবং বছরে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে বই শোনার সুযোগ পান শ্রোতারা। তবে বই মেলা উপলক্ষ্যে শুনবই স্টলে এক মাসের সাবস্ক্রিপশন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। আর বার্ষিক ফি পড়বে ৬০০ টাকা। মেলায় এরই মধ্যে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন জান্নাতুল। বললেন, ‘সবাই অনেক অ্যাপ্রিশিয়েট [প্রশংসা] করতেছে। স্টলে এসে ইনস্টল করে নিয়ে গেছে, সাবস্ক্রিপশন করে নিয়ে গেছে। এই যুগে এসে অনেকে বই পড়ার সময় পাচ্ছে না। সবাই বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।’ ডিজিটাল মাধ্যমে বইয়ের এই আধুনিক রূপের নানা সুবিধার কথাও জানালেন তিনি। ‘বাড়িতে কাজ করার সময়, কিংবা ট্রাভেল করার সময় যখন বই পড়া হয় না, তখন এই বইগুলো পড়া যাচ্ছে। এখন তো সবাই টেকনলোজিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল বই আমাদের ফিউচার। আমাদের অ্যাপে ১০ থেকে ৯০ বছর বয়সি, সবার উপযোগী কনটেন্ট রয়েছে। অনেকে আছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাদের জন্য তো বেশি ইউজফুল [উপকারী] হবে।’
কাহিনীক অ্যাপে এককালীন কোনো সাবস্ক্রিপশন ফি নেই। প্রতিটি বই কিনতে হয় আলাদাভাবে, অনেকটা বাঁধাই করা বই কেনার মতো। একবার কেনার পর আজীবন সেটি ব্যবহার করা যাবে, বলছেন ইমরাদ। তার এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে বললেন, ‘সাবস্ক্রিপশন মডেলে একজন লেখক একবার মাত্র টাকা পাচ্ছেন। আর আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে একজন নবীন লেখকও আজীবন টাকা পাবেন, যতবার তার বই কেনা হবে কিংবা মানুষ শুনবে। তার উত্তরাধিকারেরাও অর্থটা পাবেন।’ মেলায় ‘কাহিনীক’ অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলেই উপহার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকার গিফট কুপন, যা দিয়ে অ্যাপটিতে বই কিনতে পারবেন শ্রোতারা। আরেকটি স্টলে দর্শনার্থীদের বেশ ভিড়। আকর্ষণীয় গ্রাফিক্সে সাজানো দোকানটির নাম ‘বইঘর’। ‘বইঘর’ অ্যাপে বই শোনার পাশাপাশি রয়েছে ই-বুক পড়ার সুযোগ।