ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে আমদানি-রপ্তানি, ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ। তৃণমূল পর্যায়ে হাতের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলো শাখার সংখ্যা বাড়িয়ে চলছে। ২০২৩ সালে বছরজুড়ে ব্যাংকিং খাতে ছিল তারল্য সংকট। নতুন ঋণ দিতে পারেনি ব্যাংকগুলো। উপরন্তু ডলার সংকটে আমদানি বাণিজ্যও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এত সংকটের মধ্যেও দেশে ব্যাংকিং ব্যবসার পরিধি বেড়েছে।
এর কারণ সম্পর্কে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে ব্যাংকিং সেবার চাহিদা আছে। আর সে চাহিদা পূরণ করতেই ব্যাংকগুলো নিজেদের শাখার সংখ্যা বাড়াতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ১১ মাসে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত শাখার সংখ্যা বেড়েছে ৯৩টি। গড়ে প্রতি মাসে শাখার সংখ্যা বেড়েছে ৮টিরও বেশি। ২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৪৬। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে এ সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ১৫৩। ১১ মাসে শাখা বেড়েছে ৯৩টি। সময়ের প্রয়োজনে সব শাখাই এখন অনলাইন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। সব শাখাতেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অনলাইন টাকা জমা এবং স্থানান্তরের সুবিধা দেওয়া হয়। বেসরকারি সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাশরুর আরেফীন এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে। এখন এটি ৪৮০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। আমাদের এখানে অর্থনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট হলো আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বাইরে একটা সমপরিমাণ বা বড় আকারের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি আছে। এখানে ব্যাংকিং ব্যবসা খুবই সামান্য। তাই সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। এজন্যই ব্যাংকগুলো শাখা কার্যক্রম, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করছে। অর্থনীতি যত বড় হতে থাকবে, ব্যাংকের ব্যবসার পরিধিও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। ব্যাংকিং খাতে চলমান সংকটের ব্যাপারে মাশরুর আরেফীন বলেন, সব ব্যাংক সংকটে নেই। কোনো কোনো ব্যাংক ভালো আছে। তাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। ভালো মুনাফা করছে। যারা ভালো করতে পারেনি তারা চেষ্টা করছে ভালো করার।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি বলি, আমাদের ‘ম্যাট্রেস মানি’ বা বিছানা-বালিশের নিচে থাকা টাকা আমানত হিসেবে টানতে পারলে ব্যাংকের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়বে। অর্থনীতিতেও এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে। এদিকে, অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যও বড় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিসংখ্যান অনুসারে অর্থবছর ২০২২-২৩-এ ৭৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও ৫৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছে দেশে। নভেম্বর ২০২৩ সালে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৮।
এসব হিসাবে লেনদেনের সংখ্যা ৯৭ লাখ ৪৭ হাজার ২৪০। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮২ হাজার ৮৬৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ৯২১। লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬৯ লাখ ১ হাজার ৮৫৪টি ও আর্থিক মূল্য ৩৩ হাজার ৯২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় থাকা মোট আমানতের পরিমাণ ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় সঞ্চয় আমানত রয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
প্রবাসীদের সঞ্চয় আছে ২ হাজার ৭৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বিশেষ আমানত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৯২ কোটি ২১ লাখ টাকা। স্থায়ী আমানত আছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। পুনঃসঞ্চয় স্কিমের আমানত আছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ৩৭ হাজার ৪১৯টি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে আমানত আছে ৪২ হাজার ৩৫৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। স্পেশাল পারপাস আমানত আছে ৪৪ হাজার ৮৫৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আলোচনায় নিষ্পত্তিজনিত আমানত ও প্রতিশ্রুত আমানত নোট আছে ৮৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর ৩৭১ হিসাবে ব্লকড আমানত আছে ৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ১২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। শুধু নভেম্বরে কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ১০০টি। লেনদেনের পরিমাণ ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২৩ সালে কার্ডে লেনদেন সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ১২৩টি। লেনদেনের মূল্য ৩৯ হাজার ৬০১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। নভেম্বর শেষে এটিএম বা অটোমেটেড টেলার মেশিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৩৭। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪৫৮টি ও গ্রামাঞ্চলে ৩ হাজার ৯৭৯টি। এর বাইরে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত পিওএস মেশিনের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৪৪।