পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সমন্বিত কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম লঙ্ঘন করে কিছু কোম্পানির পরিচালক ওই পরিমাণ শেয়ার সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত শেয়ারের কিছু অংশ বিক্রি করে বেআইননিভাবে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নিজ নামে থাকা প্রত্যেকের সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বিধান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সমন্বিতের পাশাপাশি পরিচালকদের অনেকেই এ নিয়ম মানছেন না। তবে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষেত্রে শেয়ার ধারণ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জানা গেছে, ৩৩টি কোম্পানি গত ১৩ বছরে এ আইন মানতে পারেনি। পুঁজিবাজার ধসের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১১ সালে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাকতার নিয়ম চালু করে। পরিসংখানে দেখা গেছে, গত ১৩ বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৩টি কোম্পানি এই নির্দেশনা পরিপালন করেনি। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের সাতটি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের পাঁচটি, প্রকৌশল খাতের আটটি, আইটি খাতের দুটি, খাদ্য খাতের দুটি, আর্থিক খাতের চারটি, পাট খাতের একটি, জীবন বিমা খাতের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে ফ্যামিলিটেক্স লিমিটেড, অ্যাক্টিভ ফাইন, আফতাব অটোমোবাইলস, আলহাজ টেক্সটাইল, আজিজ পাইপস, অ্যাপোলো ইস্পাত, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, সেন্ট্রাল ফার্মা, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনিং, রিং শাইন, ইস্টার্ন কেবলস, এফএএস ফিন্যান্স, ফনিক্স ফিন্যান্স, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, ফু-ওয়াং ফুড, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাইন ফুড, ইনটেক লিমিটেড, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড, মিথুন নিটিং, নর্দান জুট, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ফার্মা এইড, এএফসি অ্যাগ্রো, সালভো কেমিক্যাল, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড।
জানা গেছে, কোনো কোম্পানির পরিচালক শেয়ার ধারণ ক্ষমতার বাধ্যবাধকতার নিয়ম লঙ্ঘন করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারে। একটি সূত্র বলেছে, যেসব কোম্পানি এরই মধ্যে নিয়ম মানেনি, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্বে এসে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং প্রত্যেক পরিচালকের সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের নিয়মের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বিএসইসি। ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্তপূরণ না করে পদে থাকায় সেই বছরের সেপ্টেম্বরে ৯টি কোম্পানির ১৭ জন পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে পুনরায় কঠোর অবস্থান নেয়।