এমডি অপসারণে লাগবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে কাউকে বাদ দিতে চাইলে লাগবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি। এমনকি বাদ দিতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত দেবে, তাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। অন্যদিকে ব্যাংকে এমডি নিয়োগের আগে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম অভিজ্ঞতাসহ প্রস্তাব পাঠাতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এমডি নিয়োগে অনুমোদন দেবে। গত মঙ্গলবার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগসংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, চরম স্খলন বা বিচ্যুতিপূর্ণ কাজ না করলে চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগে কাউকে এমডি পদ থেকে অপসারণ বা চুক্তি বাতিল করা যাবে না। কারও চুক্তি বাতিল বা অপসারণ করতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এরূপ প্রস্তাব অনুমোদন করলে এক মাস পর তা কার্যকর হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নাকচ করলে মেয়াদের অবশিষ্ট সময় এমডি স্বপদে বহাল থাকবেন। চুক্তির মেয়াদ শেষের আগে কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যক্তিগত শুনানির পর যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা কার্যকর হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়, এমডি নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এ জন্য নিয়োগের দুই মাস আগে প্রয়োজনীয় নথি, তথ্যসহ মনোনীত ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। তার যোগ্যতা, উপযুক্ততা, দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের গুণাবলির বিষয় নিয়োগসংক্রান্ত কমিটির কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে নিয়োগে অনুমোদন না দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হবে। আর এমডি নিয়োগের আগে বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দিতে হবে। পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। সেখানে খেলাপি ঋণ আদায়ে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অবলোপন করা ঋণ আদায়, আর্থিক, ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি অর্জন এবং ব্যাংকের মুখ্য আর্থিক সূচকের উন্নতির বিবরণ দিতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের আগে চারিত্রিক ও নৈতিক বিশুদ্ধতার বিষয়টি দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বিরূপ পর্যবেক্ষণ থাকা ব্যক্তিকে এমডি করা যাবে না। অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো পদ থেকে অপসারণ হলে তাকে এ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ফৌজদারি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত, জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে কিংবা কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ম লঙ্ঘনজনিত কারণে দণ্ডিত হলেও এমডি নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
ব্যাংকের এমডি হতে লাগবে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা
বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ গঠনের নীতিমালার পর এবার ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ন্যূনতম বয়স ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের এ নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একজন উপযুক্ত, পেশাগতভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়া আবশ্যক। ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত ঝুঁকি মোকাবিলায় অধিকতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে, ব্যাংকের এমডি নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারির আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। সার্কুলারে একজন এমডি বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আর্থিক স্বচ্ছতা ও সততা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণের জন্য খেলাপি নন। তিনি পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ বন্ধ করেননি কিংবা পাওনাদারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় হতে অব্যাহতি লাভ করেননি। তিনি কর খেলাপি নন। তিনি কোনো সময় আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হননি। ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বীয় পেশায় দায়িত্ব পালনকালে কোনোরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। এমডি হিসেবে নিয়োগ পেতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে।