ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৯ শতাংশ
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়) ভালো খবর পাওয়া গেছে। দেশে নতুন বছরের প্রথম দুই মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা প্রায় ২১৭ কোটি বা ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে, যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কখনও ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৬ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারির এই পরিমাণ প্রবাসী আয় গত সাত মাসে আসেনি। এর আগে গত বছরের জুনে সর্বোচ্চ ২১৯ কোটি ডলার এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। ব্যাংকাররা জানান, রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে এখন আনুষ্ঠানিক দরের বাইরে গিয়েও অনেক ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
এ কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেকোনো মূল্যে রেমিট্যান্স আনার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। সর্বশেষ রেমিট্যান্স কেনার আনুষ্ঠানিক দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে বাফেদা ও এবিবি। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। সে হিসাবে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারে দাম সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা ২৪ পয়সা পর্যন্ত দিতে পারে। কিন্তু অনেক ব্যাংক ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত দামে রেমিট্যান্স কিনেছে। খোলাবাজারেও ডলারের দর এখন ১২২ থেকে ১২৫ টাকা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে কাজের জন্য গেছেন। তার আগের দুই বছরও বিপুলসংখ্যাক কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে সেই অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসছে না।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সবমিলিয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। এর মানে, ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে।
সেই হিসাবে গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। তা সত্ত্বেও প্রবাসী আয়ে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ, প্রতি বছর যে পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে অনুযায়ী প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। গত মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, তা আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ২১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছে। এদিকে প্রবাসী আয় ভালো থাকায় জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩১ জানুয়ারি মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫০৯ কোটি ডলার, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ডলার। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৭৬ কোটি ডলার, যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। প্রবাসী আয় ছাড়াও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার সোয়াপসহ বিভিন্ন উপায়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।