ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা

রমজানের সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

রমজানের সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

সারা দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে সব পণ্যের দাম। চাহিদা অনুযায়ী দেশে রমজানের ভোগ্যপণ্য যেমন- ছোলা, চিনি, খেজুর, ভোজ্য তেল ইত্যাদির আমদানি ও সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপরেও আসন্ন রজমানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে, সর্বশেষ তিন মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) যে পরিমাণ খেজুর আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে রমজানের চাহিদা ভালোভাবেই মেটানো যাবে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। রমজান শুরুর সপ্তাহখানেক আগেই বাজারে দাম বেড়েছে খেজুরের। গত রমজানে নিম্নমানের খেজুর প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন একই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। ভোজ্য তেল বাদে ছোলা এবং চিনির বাজারের অবস্থাও একই। বিশ্ববাজারে দাম কমায় গত রমজানের তুলনায় এবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে প্রায় ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম কমবে এমন আশায় সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এর পরও দাম বাড়লে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের দামে এর প্রভাব নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। এমনকি শুল্ক ছাড়ের পর উলটো চিনির দাম এক দফা বেড়েছে। সম্প্রতি এসআলম গ্রুপের সুগার মিলে অগ্নিকাণ্ডের পর ফের বেড়েছে চিনির দাম। চিনির দাম মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা দাম বৃদ্ধির হার আরও বেশি। অথচ চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পরও দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাংসের দাম বাড়ছে। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে গত তিন মাসে রমজানে ভোগ বাড়ে এমন ৪ ধরনের পণ্য ডেলিভারি হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৮৬০ মেট্রিক টন। এই চার ধরনের পণ্য (ছোলা, চিনি, খেজুর ও ভোজ্য তেল) খালাস শেষে এরইমধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জাহাজ থেকে খালাসের পর দ্রুত শুল্কায়ন এবং ডেলিভারি কার্যক্রম সচল রাখতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে ছয় ঘন্টার মধ্যে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত তিন মাসে খেজুর খালাস হয়েছে ৩৩, ৫৪০.৭৯ মেট্রিক টন। এ ছাড়া গত তিন মাসে চিনি ১ লাখ ৬০১ মেট্টিক টন, ভোজ্য তেল ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪.০৮ মেট্রিক টন, ছোলা ৯১ হাজার ৩৫৪.৩৩ মেট্টিক টন খালাস হয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে আনা আরও প্রায় ৫ শতাংশ পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ায় আছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯২ শতাংশ আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। দেশে পরিবাহিত মোট কন্টেইনারের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিত সাহা বলেন, ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান সংকট থাকলেও দেশের চাহিদা অনুযায়ী রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য আমদানি করেছি। ফলে বাজারে কোনো পণ্যেরই সরবরাহ সংকট কিংবা দাম অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থির করার সুযোগ না পায় সেক্ষেত্রে রমজানের আগ মুহূর্তে ভোক্তাদের এক সাথে পণ্য কেনার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিমাসে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ মেট্রিক টন। রমজানে এই চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ মেট্রিক টনে। একইভাবে, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮-২০ লাখ টন। সেই হিসেবে চিনির মাসিক চাহিদা দেড় লাখ টন। তবে রমজানে সেটি বেড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেশে প্রতিবছর ছোলার বাার্ষিক চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হয় রোজার মাসকে কেন্দ্র করে। রমজানে ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন। রোজার সময় পর্যন্ত ছোলা আমদানির পরিমাণ এক লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার টন। এরমধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৪০ হাজার টন খেজুর প্রয়োজন হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত তিন মাসে খেজুর খালাস হয়েছে ৩৩, ৫৪০.৭৯ মেট্রিক টন। আমদানিকারকরা বলছেন, রমজান মাস ঘিরে যেসব পণ্য আমদানি হয়েছে সেগুলো চাহিদার তুলনায় একই পরিমাণ। কিছু পণ্য চাহিদার তুলনায় বেশি। ফলে রমজানে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক থাকবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধি, অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধি, শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পণ্যের দাম বেশি। গত বছর প্রতিকেজি ছোলার বিক্রি হয়েছিল ৮০-৯০ টাকায়। এ বছর পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও ডলার রেটের কারণে দাম কিছুটা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়ে প্রতিকেজি ১৪২-১৪৫ টাকা হয়েছে, যা গত রমজানে বিক্রি হয়েছিল ১১০-১১৫ টাকা কেজি। যদিও কমেছে ভোজ্য তেলের দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন লিটারপ্রতি ১৬০-১৬৫ টাকা, যা গত বছরে বিক্রি হয়েছিল ১৮০-১৯০ টাকায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত