দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিযোগিতা আইন ও এর প্রয়োগ বাংলাদেশে নতুন হওয়ায় এই আইনের সুফল পেতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য, বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রতিযোগিতা শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত তুলে ধরেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর কাওরানবাজারে ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ফোরাম’ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুর্যাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিআইআরডিএপি) এর গবেষণা পরিচালক ড. মো. হেলালউদ্দিন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ্ এবং লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা। অধ্যাপক ড. একে এনামুল হক বলেন, দ্রব্যমূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা আইন ও প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ, বাজার ব্যবস্থাপনা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইনের ভূমিকা ও করণীয় সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট বাজার নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটরি সংস্থাগুলোগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী ও ক্ষমতায়ন করার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে বাজার সুরক্ষা, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা, বিনোয়োগবান্ধব পরিবেশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। ড. মো. হেলালউদ্দিন বলেন, বাজারে কোনও দ্রব্যের দাম বাড়লেই সিন্ডিকেট হচ্ছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। যেমন- তেলের ক্ষেত্রে কয়েকটি কোম্পানি তেল কিনে রাখে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও রাতারাতি দাম কমানো সম্ভব হয় না, ধীরে ধীরে কমাতে হয়। যেখানে উৎপাদক, বিক্রেতা, ভোক্তা বা সরবরাহ চেইনে অগণিত মানুষ থাকেন, সেখানে সিন্ডিকেশন সম্ভব নয়। আমাদের কৃষি খাত এমন। এখানে কৃষক, বিক্রেতাসহ অসংখ্য মানুষ কাজ করেন। এখানে আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে- আমরা বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারছি না। খালেদ আবু নাসের বলেন, দ্রব্যমূল্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা এবং ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে চাহিদার আনুপাতিক হারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা, উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের উৎসাহিত করা, উদ্ভাবন (ইনোভেশন) ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থা ও ইকোসিস্টেম তৈরি হলে উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং ভোক্তা প্রত্যেকেই উপকৃত হতে পারে। এই কাজগুলো প্রতিযোগিতা কমিশনকেই করতে হবে। ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ্ বলেন, সিন্ডিকেট একা করা যায় না। কিন্তু প্রতিযোগিতা কমিশনে এই পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, দ্রব্যমূল্য, বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রতিযোগিতা এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে আমরা এখনও সমন্বয় করতে পারিনি। সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিলে তা জমির মালিকরা পাচ্ছেন। কিন্তু এই প্রণোদনা দরকার কৃষকের। প্রান্তিক কৃষক প্রণোদনা না পেলে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রধান নির্বাহী ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান।