রোজার মাসে ইফতারে খেজুর মুসলমানদের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। রমজান মাস এলেই ভোক্তাদের চাহিদার শীর্ষে থাকে বিদেশি এ ফলটি। প্রতি বছরই রোজায় খেজুরের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবারের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সাধারণ মানের বিভিন্ন জাতের খেজুরও সাধারণ মানুষের অনেকটা নাগালের বাইরে। বাজারে অন্য নিত্যপণ্যের দামে চিড়েচ্যাপ্টা মানুষের কাছে ইফতারিতে খেজুর হয়ে উঠেছে রীতিমতো বিলাসী পণ্য। সরেজমিন রাজধানীর ফলের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, সৌদি, মিশর, দুবাই, তিউনিসিয়া, ইরান থেকে আসা বিভিন্ন জাতের খেজুরে ভরা বাজার। আমদানি করা নানান জাতের খেজুরের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মরিয়ম, মাবরুম, কালমি, দাবাস, জাহিদি, সায়ের, আজওয়া, মেডজুল, সুক্কারি ও মাশরুখ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর পাইকারিতে ৫ কেজি মরিয়ম খেজুর মানভেদে ৪ হাজার ৩০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা। কালমি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, যা বিগত বছর ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি ৫ কেজি আজওয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া মেডজুল এবার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর দাম বাড়ায় মাবরুম, মরিয়ম, আজওয়া, কালমির যে চাহিদা ছিল সেটা কিছুটা কমেছে। সাধারণ মানুষ বাজারে তুলনামূলক কম দামি খেজুর খুঁজছেন। বাদামতলীতে পাঁচ কেজি ওজনের জাহিদি খেজুরের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়া দাবাস বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি খেজুরের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে এবার বিভিন্ন জাতের মরিয়ম, মাবরুম, কালমি খেজুর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। মধ্যমমানের দাবাস, মাশরুখ, সুক্কারি ৫৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫০ টাকা কেজি দরের জাহিদি এবার ৩০০ টাকা হাঁকাচ্ছে দাম। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিনির্ভর হওয়ায় আমদানি ব্যয়, ভ্যাট, করসহ নানা খরচের কারণে খেজুরের দাম এবার গতবারের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি ট্যাক্স ও রেগুলেটরি ডিউটি ট্যাক্স দাম বাড়ার প্রধান কারণ। একজন খেজুর ব্যবসায়ী বলেন, ‘৫ বছর ধরে খেজুরের ব্যবসা করি। এত চড়া মূল্য কখনো হয়নি। ভ্যাট-ট্যাক্সের কারণে বাজারে অস্থিরতা বেশি। গত বছর প্রতি কনটেইনার মাল আনতে ট্যাক্স ছিল ৩ লাখ, এ বছর হিমায়িত কনটেইনার ট্যাক্স ধরেছে ৫৪ লাখ টাকা। কেউ এর চেয়ে কিছু কম-বেশি দিয়েও নিয়েছে। প্রতি কনটেইনারে মাল থাকে ২৫ টন। ট্যাক্স বেশি হওয়ার কারণে অনেকে মাল আমদানি করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘বাজারের সর্বোচ্চ দামের মাবরুম, মরিয়ম, মেডজুল, কালমি, আজওয়া এবার কম চলছে। মালের মজুতও রয়েছে অনেক। কিন্তু দামি খেজুরের ক্রেতা কম।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সারাদেশে খেজুরের ১০০ আমদানিকারক রয়েছেন। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা তো করোনার পর থেকে রয়েছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। কাস্টম ডিউটি ট্যাক্স, রেগুলেটরি ডিউটি ট্যাক্স যুক্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট সিন্ডিকেটের কিছুটা প্রভাব রয়েছে। অনেক আমদানিকারক শুল্ক ফাঁকি দিতে সৌদি, মিশরের উচ্চমূল্যের খেজুর কম দাম দেখিয়ে আমদানি করেছেন। কিন্তু বাজারে শুল্কের অভিযোগ দিয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিস্থিতির কাছে তারা জিম্মি। আড়তে এসে এবার দুই থেকে তিন মণের বেশি খেজুর কিনতে পারছেন না তারা। তারা বলেন, ‘এবার রমজানের এক মাস আগে থেকেই শুনছি ভ্যাট-ট্যাক্সের কারণে দাম বেশি।