ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাল নিয়ে চালবাজি চলছেই

চাল নিয়ে চালবাজি চলছেই

সব ধরনের চালের দাম হঠাৎই বেড়েছে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ধানের এক মৌসুম মাত্র শেষ হলো, আরেক মৌসুম শুরু হবে কিছুদিন পরই। আর এই মধ্যবর্তী সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সংকট না থাকলেও সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। মিলারদের দাবি হাটগুলোতে ধানের আমদানি কম, আর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবেই বাড়াতে হয়েছে চালের দাম।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, ভরা মৌসুমে কম দামে ধান কিনে এখন বেশি দামে বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি চালের বাজার ঘুরে চালের বাড়তি দাম দেখা গেছে। চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা, এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা।

৭ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রি ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা। একইভাবে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৭ টাকা, যা বিক্রি হয়েছিল ৬৯ থেকে ৭৯ টাকায়। নওগাঁর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে মোটা জাতের স্বর্ণা চাল ৪৭ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, মিলগেটেই বেশি দামে কেনা, আর পরিবহন খরচ পুষিয়ে নিতেই এমন মূল্যবৃদ্ধি। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানায়, কেনাবেচা নেই তাদের। চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দিনে ৩ থেকে ৪ মণ চালও বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

এ ছাড়া মিল মালিকরাও বলছেন, গত কয়েক দিনে হাটগুলোতে হঠাৎই বেড়েছে ধানের দর। অন্যদিকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এদিকে গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামের পাইকারি পর্যায়ে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর না হলে বাজার আরও লাগামহীন হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামের পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০-৩০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে চট্টগ্রামে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ৫০ কেজি মোটা সিদ্ধ চাল ২ হাজার ২০০ টাকা, পারিজা সিদ্ধ ২ হাজার ৪০০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ২ হাজারে ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, বালাম সিদ্ধ ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা ও মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ৫০ কেজি জিরাশাইল ৩ হাজার ৩৫০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ইরি আতপ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা, পাইজাম আতপ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা, কাটারি আতপ ১ হাজার ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বেতি আপত ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫৮০ টাকা, বাসমতি ৩ হাজার ৩৫০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা ও চিনি গুড়া আতপ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, মাত্র শেষ হলো অগ্রহায়ন মাসের ভরা চালের মৌসুম। আবার সামনেই বৈশাখে উঠবে দেশের সবচেয়ে বড় বোরো মৌসুমের চাল। এই ফাঁকেই সিন্ডিকেট করে বড় বড় মিলার ও করপোরেট কোম্পানিগুলো পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজা খান বলেন, চালের কোনো সংকট নেই। মিলাররা পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বাড়াচ্ছে। তবে এ মৌসুমে চালের দাম আর না কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন কিছু মিলার। এক মিলার বলেন, ধানের শেষ সময়ে কৃষকের কাছে ধানের মজুত কম। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মজুত সরকার আগেই চাপ দিয়ে বের করে নিয়েছে। যার ফলে ধানের বাজার বাড়তি। এই কারণে আজ চালের বাজার এমন। গত জানুয়ারিতে নির্বাচনের পরপরই বাজারে অগ্রহায়নের ভরা মৌসুমের চাল থাকার পরও হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। তারপর নানা তৎপরতায় তা কমে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ দামেই গত এক-দেড় মাস স্থিতিশীল থাকলেও হঠাৎ করে গেল এক সপ্তাহ ধরে অস্থির হতে শুরু করে চালের বাজার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত