ঈদের কেনাকাটায় বাড়ছে ভিড়
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলছে মহিমান্বিত রমজান মাস। ঈদের আর মাত্র ১৩ থেকে ১৪ দিন বাকি। তাই এই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বাড়ছে ক্রেতাদের সমাগম। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ক্রেতারা ঘুরছেন এ দোকান থেকে সে দোকান আর বিক্রেতারা দেখাচ্ছেন একের পর এক পণ্য। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল, শো-রুমগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। ফুটপাতের দোকানগুলোতেও দেখা যায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। ঈদের আগে কেনাকাটা করতে জমে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান এবং মার্কেটগুলো। সরেজমিন রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
এছাড়া দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পছন্দ ও দরদামে মিলে গেলেই কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। রোজার শুরু থেকেই প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে পুরো মার্কেট এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত। তখন মানুষের ভিড়ের কারণে ঠিকমতো হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায় না।
বড় বিপনি-বিতান এবং মার্কেটের ভেতরের দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাত, ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতেও ঈদের কেনাকাটায় আসা এসব মানুষের ভিড় দেখা যায়। আর রোজার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতিতে এবারের বিক্রি নিয়েও সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত মোড়সহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় মানুষের ব্যাপক ভিড়। ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় মূল সড়ক ধরেই হাঁটছেন অনেকে। ফলে তৈরি হয়েছে যানবাহনের ধীরগতি। আর মার্কেটগুলোর ভেতরেও জমেছে কেনা-বেচা। ক্রেতাদের কেনাকাটার তালিকায় রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা। এরমধ্যে বেশিরভাগই নারী ক্রেতা। বিশেষ করে নারী ক্রেতারা মার্কেটগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন, তারা নানা ধরনের মেকআপ ও অলংকার কিনছেন। তাছাড়া শাড়ি এবং থ্রি পিসের দোকানগুলোতে সবসময় ভিড় লেগেই আছে। এছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারেও ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ার মতো।
মুনতাহা নামের এক ক্রেতা বলেন, রোজার ঈদেই মানুষজন বেশিরভাগ নতুন কাপড়ের প্রত্যাশা করে। সেজন্য পরিবারের সবার জন্য কাপড় কিনেছি। যদিও রোজা রেখে এখানে ভিড়ের মধ্যে হাঁটাচলা করাটা খুব কষ্টকর তারপরও বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করাতে একটি অন্যরকম আনন্দ রয়েছে।
ফয়সাল আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় তুলনামূলক কম দামে জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেটি অবশ্যই দামাদামি করে কিনতে হয়। তাছাড়া এর চেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একসাথে সব ধরনের ও সব বয়সীদের কাপড় পাওয়া যায়। অন্য জায়গায় বেশি ঘুরতে হয়। কিন্তু বিক্রেতারা এখনও দাম ধরে রেখেছেন। মনে হচ্ছে সব কাপড়ের দামই তারা একটু বেশি চাইছেন।
মৌচাক মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহিম ও তার দুই সন্তান। তিনি বলেন, ঈদের শপিং করতে এসেছি। ঈদের মার্কেটিং করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবছর অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সবকিছু। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটে আসা ক্রেতা ইমরান বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সাত বছরের সন্তানকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলে শাড়ী-পাঞ্জাবিসহ আমার বাচ্চার জন্য জামা-কাপড় কিনব।’
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই বিক্রি বেড়েছে অনেক। ব্যবসায়ীদের ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত বছর মার্কেটে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার এখন সে ধরনের কোনো শঙ্কা কিংবা ভয়ভীতি না থাকার কারণে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসছেন। এছাড়া ভালো ব্যবসা এবং সাধারণ ক্রেতাদের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি ভালো দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই মানুষজন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এখানে কেনাকাটা করতে পারছেন। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক মার্কেটে দেখভাল করছি। তবে মাসের মাঝামাঝি সময় হওয়ার কারণে এখনো অনেক মানুষ কেনাকাটা শুরু করেননি। মাস শেষে বেতন পাওয়ার পর এই জনস্রোত আরো বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। অপরদিকে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনার বিষয়টি জানিয়েছেন নিউমার্কেট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হালদার অর্পিত ঠাকুর। তিনি বলেন, প্রতিটি মার্কেটের নিচে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। রোজার শুরু থেকেই পুলিশ বক্স করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে আমরা সচেষ্ট রয়েছে। ক্রেতারা যেন নির্ভীক নেই করতে পারেন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। যেকোনো সহায়তার জন্য সাধারণ মানুষজন আমাদের কাছে আসতে পারেন। ঈদের বিশেষ দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করতে নানাভাবেই প্রস্তুতি নেয় মানুষ। তাই এই দিনটিকে কেন্দ্র করেই মাসব্যাপী চলে তাদের কেনাকাটা।