ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

মধ্যস্বত্বভোগীরা দেশের প্রধান সমস্যা

মধ্যস্বত্বভোগীরা দেশের প্রধান সমস্যা

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, মধ্যস্বত্বভোগী, ঋণখেলাপি এবং টাকা পাচারকারীরা বাংলাদেশের মূল সমস্যা। এদের কারণেই চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তাদের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের ৭০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় অথচ পরিশোধ করে না। প্রণোদনার অর্থ লুটেরাদের পেটে চলে যায়। প্রকৃত সুবিধাভোগীরা তেমন একটা পায় না। নিজের রচিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়: জাতীয় সপ্তবার্ষিক কর্মপরিকল্পনার একটি প্রস্তাবিত রূপরেখা’ গ্রন্থের ওপর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। গত সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) প্রধান কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ও ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন। অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের পথে অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনিই পারেন বৃত্তের বাইরে আসতে। তিনি বৃত্তের বাইরে আসতে পারলে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

মধ্যস্বত্বভোগী প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের খাদ্যপণ্যের সমাধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না। এখানে সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর সময়ে তিনি টিসিবি প্রতিষ্ঠা করেন এবং খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এখনও টিসিবিকে কার্যকর করা সম্ভব এবং বাজারের সমস্যা সমাধানে তাই করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা তার রাজস্বনীতিতে বলেছিলেন, ধনিদের কাছ থেকে বেশি হারে কর আদায় করতে হবে। সেই অর্থ দিয়ে বিত্তহীন ও কম বিত্তের মানুষের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প করতে হবে। এখনও তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, দেশের আড়াই কোটি মানুষের কর দেওয়ার কথা। তাদের মধ্যে ৮৭ লাখ অতি ধনীও আছে। অথচ কর আদায় হয় সামান্যই। ব্যাংকে যত আমানত আছে, তার অর্ধেক কোটিপতিদের। এ ধরনের উন্নয়ন সমতাধর্মী নয়। মাত্র কয়েকজনের হাতে অগ্রগতির ফসল তুলে দিলে তাকে উন্নয়ন বলা যায় না। উন্নয়ন সর্বজনীন হওয়া দরকার। রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্য দিয়ে জনগণের জন্য যা মঙ্গলজনক, তা নির্ধারণ করতে হবে।

ড. রওনক জাহান বলেন, সরকারের মধ্যে অনেকে ভালো কাজ করতে চান। কিন্তু অতি প্রভাবশালীদের তারা অতিক্রম করতে পারছেন না। দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলে, তার চাকরি থাকছে না। দেশে আরেকটি ধারাবাহিক সমস্যা হলো নীতি বাস্তবায়নের। নীতিগুলোতে কাঠামোগত দিকনির্দেশনা থাকে।

কীভাবে এসব কাঠামো কাজ করে, তাও গুরুত্বপূর্ণ। একটা ভালো নির্দেশনা যে নিয়তে দেওয়া হয়, তা পরে একই রকম থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতিমালা। নির্দলীয় হওয়া ছিল এর মূলনীতি। কিন্তু কিছুদিন চলার পর একে দলীয় বানিয়ে ফেলা হলো। এ রকম আরও বহু উদাহরণ আছে দেশে। তিনি বলেন, ড. ফরাসউদ্দিনের বইটি নীতিনির্ধারকদের জন্য লেখা হলেও সাধারণ পাঠকরাও উপকৃত হবেন। তার বইয়ে উল্লিখিত ঋণখেলাপির বিষয়ে আশির দশক থেকে কথা হচ্ছে। ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। বিষয়গুলো বহুদিন ধরে বলে আসছেন তারা। কিন্তু এসব নিয়ে সরকার কিছু করছে না। আবার অনেক সময় করবে বললেও হচ্ছে না। এর মানে নিশ্চয়ই এখানে কিছু অতি প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও লবি আছে। যারা এসব সংস্কার চায় না। অন্যান্য বক্তারা ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন গ্রন্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, গ্রন্থটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত