ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় কমে ৯২৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এই ব্যয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম মানা হয়নি। নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যাংকগুলো ৪৪ শতাংশ ব্যয় করেছে ‘অন্যান্য’ খাতে। আর শিক্ষায় মাত্র ১৭ দশমিক ৬৫ এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন খাতে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নিয়ম না মানা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিদ্যমান নিয়মে যেসব ব্যাংক নিট মুনাফা করবে, শুধু তারা সিএসআর ব্যয় করতে পারে। মুনাফার কত শতাংশ ব্যয় করবে বা আদৌ করবে কিনা তা ওই ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। তবে ব্যয় করলে শিক্ষা খাতে অন্তত ৩০ শতাংশ খরচ করতে হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ আয়-উৎসারী কাজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতের আওতায় ব্যয় করা যাবে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের নিট মুনাফার ভিত্তিতে গত বছর সিএসআর করেছে ব্যাংকগুলো। ওই বছর ৯টি ব্যাংক নিট মুনাফা করতে পারেনি। ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল, পদ্মা, বাংলাদেশ কমার্স, বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেন, আইসিবি ইসলামিক, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। ২০২৩ সালে নির্দেশনার আলোকে মাত্র ১৬টি ব্যাংক শিক্ষায় ৩০ শতাংশ বা তার বেশি ব্যয় করেছে। সব মিলিয়ে এ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের নিয়ম মেনেছে ১৯টি ব্যাংক। সামগ্রিক খাত বিবেবচনায় এ ক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ১০টি ব্যাংক নিয়ম মেনে ২০ শতাংশ বা তার বেশি ব্যয় করেছে। সব মিলিয়ে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ব্যয় কমেছে ২০৫ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ব্যাংক খাতের সিএসআর ব্যয় হয় ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। মূলত বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন জালিয়াতি করে সংকটে পড়া ইসলামী ব্যাংকের কারণে এমন হয়েছে। গত বছর ব্যাংকটি সিএসআর ব্যয় করেছে মাত্র ৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের বছর যা ছিল ৩২৭ কোটি টাকা। সিএসআর ব্যয়ে শীর্ষ দশে থাকা অন্য ব্যাংকের মধ্যে ডাচ্-বাংলা ৯৪ কোটি, যমুনা ৫৭ কোটি, মার্কেন্টাইল ৫৬ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ৫৪ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ৫১ কোটি, এক্সিম ৪৪ কোটি, সাউথইস্ট ৪০ কোটি, ইউসিবি ৩৮ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়া ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ২০১৩ সালের পর লাইসেন্স পাওয়া ১৩টি ব্যাংকে আগের বছরের নিট মুনাফার অন্তত ১০ শতাংশ পরবর্তী বছরে সিএসআর খাতে ব্যয়ের শর্ত রয়েছে। কোনো ব্যাংকের নিট মুনাফা না হলে সিএসআরে ব্যয় করতে হবে না। এসব ব্যাংকের মধ্যে গত বছর ইউনিয়ন, মেঘনা, এনআরবি ও কমিউনিটি ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করেছে।