গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এর ওপর ভর করেই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মূল্যসূচক।
সেই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে যে দরপতন হয়েছে তাতে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ বেড়ে লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে এ লোকসান হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে শেয়ারবাজারে পতন শুরু হয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেও এ পতনের ধারা অব্যাহত ছিল। তবে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখী হয় বাজার। দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ার দাম এক জায়গায় আটকে রাখার পর গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা লাগে। এই ধাক্কা সামলে যখন শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে জেড গ্রুপ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা শেয়ারবাজারের পতন ত্বরান্বিত করে।
কিসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়- ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অর্ন্তবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে হুট করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর ঘোষণা আসে নতুন করে আর কোনো কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নেয়া হবে না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ায় হয়। এভাবে কিছু কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শেয়ারবাজার দরপতনের মধ্যে পড়ে। গত ১৭ জানুয়ারি ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ধারাবাহিকভাবে কমে সেই গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার সেই বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসই’র বাজার মূলধন হারায় ১ লাখ ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষদিকে বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরায় বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারির সঙ্গে তুলনা করলে ডিএসইর বাজার মূলধন এখনো ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে কম রয়েছে। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। অন্যভাবে বলা যায় ওই পরিমাণ অর্থ ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
এতে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮টির। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৮ কোটি টাকায়।
যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। এদিকে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেনের গতি কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। দৈনিক গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
২০ কোটি ১১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, লাভেলো আইসক্রিম, এমারেল্ড অয়েল, ফু-ওয়াং সিরামিক, গোল্ডেন সন এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।