একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংক

সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ব্যাংকের সম্পদের মূল্যায়ন, যার ভিত্তিতে একীভূত হতে চলা ব্যাংক কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম চূড়ান্ত করা হবে। হিসাববিদ ও ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। তবে ব্যাংক ও আর্থিক খাত একীভূত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে- ব্যাংকের সম্পদ ও দায়ের মূল্যায়ন বা নির্ধারণ কীভাবে হবে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণের নীতিমালায় বলা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানিগুলো পারস্পরিক সমঝোতা বা সম্মতিতে সম্পদের মূল্যায়নের বিষয়ে সম্মত হতে পারবে। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, সাধারণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে যদি এ ধরনের বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে মূল্যায়ন ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত নয়, তাহলে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারে। যেমন (ক) বিশেষ/সুনির্দিষ্ট/স্বতন্ত্র কোনো সম্পদ; (খ) ঋণ বা বিনিয়োগের শ্রেণিবিভাগ; (গ) কোনো দায় নির্ধারণে সমস্যার সম্মুখীন হলে কোম্পানিসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ নেবে। সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে এবং সমস্যার সমাধান করবে। মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে সম্পদ বা দায়ের মূল্য নির্ধারণ বা সমস্যার নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো তা মানতে বাধ্য থাকবে। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আবশ্যক মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। সম্পত্তি ও দায় হস্তান্তরের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সমঝোতার সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়। বলা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানির মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এবং ন্যায্যমূল্য নির্ধারিত হবে এবং সেই মূল্য নির্ধারণ প্রিমিয়াম বা ডিসকাউন্টে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে হস্তক্ষেপ করবে না, তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ মর্মে সন্তুষ্ট হবে যে পারস্পরিকভাবে সম্মত মূল্য ন্যায্য ও যুক্তিসংগত। পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্কিমের সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যায়নে ১০ বিবেচনা- যে ব্যাংক একীভূত হবে এবং যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, তাদের সম্পদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানির মূল্য নির্ধারণে নীতিমালার পরিশিষ্ট-খণ্ডতে আরো যা বলা হয়েছে, তা হলো - ১) সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য বিনিয়োগ পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখের চলতি বাজার দরে মূল্যায়ন করতে হবে। ২) সরকারি সিকিউরিটিজ অর্থ মন্ত্রণালয়/বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সংশ্লিষ্ট সার্কুলার অনুসারে মূল্যায়ন করতে হবে। ৩) অন্যান্য সিকিউরিটি পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখের অভিহিত মূল্য অথবা নগদায়নযোগ্য মূল্যে মূল্যায়ন করতে হবে। ৪) কোনো সিকিউরিটির মূল অর্থ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হলে সিকিউরিটি এমনভাবে মূল্যায়ন করতে হবে, যা ভবিষ্যতে পরিশোধযোগ্য অবশিষ্ট বকেয়ার মূল অর্থ ও সুদের কিস্তির সাপেক্ষে যুক্তিসংগত বিবেচিত হয়। ৫) কোনো অস্বাভাবিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো সিকিউরিটি, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড অথবা অন্য কোনো বিনিয়োগের বাজারমূল্য যুক্তিসংগত হিসেবে বিবেচিত না হলে সেই বিনিয়োগের মূল্য অব্যবহিত পূর্ববর্তী ছয় মাসের গড় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে। ৬) বাট্টাকৃত ও ক্রীত বিল, হিসাব বইতে উল্লিখিত ঋণ বা বিনিয়োগ এবং অন্যান্য সম্পদসহ ঋণ বা বিনিয়োগসমূহকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে: (ক) ভালো ও সহজে আদায়যোগ্য ঋণ/বিনিয়োগ (খ) সহজে আদায়যোগ্য নয় এরূপ মন্দ ও সন্দেহজনক ঋণ/বিনিয়োগ। ৭) গুডউইল বা সুনামের হিসাবায়ন বাজারমূল্য এবং নিট সম্পদ মূল্যের পার্থক্যের ভিত্তিতে করতে হবে। ৮) জমি/প্রাঙ্গণ ও অন্যান্য সব অস্থাবর সম্পদ ও দাবি পরিশোধের সূত্রে অর্জিত সম্পদ বাজারদরে মূল্যায়ন করতে হবে। ৯) আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম ইত্যাদি লিখিত মূল্যে মূল্যায়ন করতে হবে। ১০) অন্যান্য, যদি থাকে, প্রচলিত ও যুক্তিসংগত নিয়মে মূল্যায়ন করতে হবে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা, আর্থিক ও আইনি ডিউ ডিলিজেন্স সম্পর্কে বলা নীতিমালায় বলা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানি/ফাইন্যান্স কোম্পানি তার বা যে অংশ অধিগ্রহণ করা হবে তার নিরীক্ষা, আর্থিক ও আইনি ডিউ ডিলিজেন্স করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা ফার্ম হতে এক বা একাধিক নিরীক্ষা ফার্মকে নিয়োগ দেবে। এই নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি ডিউ ডিলিজেন্স-সংক্রান্ত খরচ বাংলাদেশ ব্যাংক বহন করবে। নিরীক্ষা ফার্ম নিরীক্ষার সময় কোনো তথ্য বা দলিলাদি পেলে সে বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করবে এবং সেই তথ্য বা দলিলাদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে প্রকাশ করবে না এমন অঙ্গীকার করবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম নিরীক্ষা, আর্থিক ও আইনি ডিউ ডিলিজেন্স প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাখিল করবে।