ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উচ্চ বৈষম্যের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ 

উচ্চ বৈষম্যের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ 

উচ্চ বৈষম্যের দেশে পরিণত হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দেশের ক্ষেত্রে বৈষম্যের নির্দেশক জিনি সহগ সূচক দশমিক ৫০০ পয়েন্ট পেরোলেই সেই দেশকে উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সূচক বেড়ে এখন দশমিক ৪৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষায়িত মিলিয়ে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে ৪০টি। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন তিনটি, বেসরকারি মালিকানাধীন ৩২টি ও বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঁচটি।

এই ৪০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত ডিসেম্বর শেষে গ্রাহক বা আমানতকারীর হিসাব ছিল চার লাখ ৩১ হাজার ২২১টি। যেখানে আমানতের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, এই আমানতের অর্ধেকেরও বেশি কোটিপতিদের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোটিপতিদের আমানত ২৪ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকার বেশি আমানত হিসাব মোটে ছয়টি। এ ছয় আমানতকারীর হিসাবেই আছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

আর কোটি টাকার বেশি আমানত জমা আছে, এমন হিসাবের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৮৭। পক্ষান্তরে, পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক কোটি টাকার কম আমানত রেখেছেন এমন আমানতকারীর হিসাব আছে চার লাখ ২৫ হাজার ৯৩৪টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যত আমানত ছিল, তার প্রায় ৫৫ শতাংশই রয়েছে মাত্র সোয়া এক শতাংশ আমানতকারীর হিসাবে। আর পৌনে ৯৯ শতাংশ আমানতকারীর হিসাবে ছিল মোট আমানতের সাড়ে ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চার লাখ ২৫ হাজার ৯৩৪ জন আমানতকারী মিলে জমা রেখেছেন ১৯ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

তার বিপরীতে মাত্র পাঁচ হাজার ২৮৭ জন আমানতকারী জমা রেখেছেন ২৪ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। এদিকে অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। একশ্রেণির মানুষ রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে উঠছেন। তার বিপরীতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তসহ বিপুল জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়ে টান পড়ছে। দেশে বৈষম্য এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটিকে চরম উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাই বৈষম্য কমাতে ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছেন তারা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে আমানত রয়েছে, তার মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির আমানত যেমন আছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতও আছে। ফলে কোটি টাকার বেশি আমানত যেসব হিসাবে আছে, তার সবই ব্যক্তিশ্রেণির আমানত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতও আছে এর মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনই নয়, দেশের প্রকট বৈষম্যের তথ্য উঠে এসেছে সরকারি পরিসংখ্যানেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর তথ্য বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতেই এখন দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত