ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ কমার শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ কমার শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। এর সঙ্গে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে না পারার বিষয়টি যোগ হয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে পণ্য পরিবহন ব্যয়। বাড়বে পণ্য পৌঁছানোর সময়ও। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের ক্রেতারা পোশাকের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আদেশ হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরিয়ার দামেস্কে নিজেদের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ নিতে গত রোববার ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশ এ উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে সময় মতো পণ্য হাতে না পাওয়ার শঙ্কায় ইউরোপের ক্রেতারা তাদের কাছাকাছি কোনো দেশে রপ্তানি আদেশ দিতে পারে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে পণ্য পৌঁছাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করা হয়। পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রেও যা সাশ্রয়ী। এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুয়েজ খাল হয়ে স্বল্পপথের ব্যবধানে লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ খালের মাধ্যমে লোহিত সাগর দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্দরে পৌঁছে। এতে সময় বাঁচে অন্তত ১৫ দিন।

এই রুট ব্যবহার করতে না পারলে বিকল্প দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে যেতে হয়। এতে অতিরিক্ত সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে সময় লাগে অতিরিক্ত ১৫ দিন। পরিবহন ব্যয়ও বাড়ে এতে।

সাধারণত ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা পরিবহণ ব্যয় বহন করে থাকে। তবে বাড়তি ব্যয় শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের ওপরই চাপানো হয় কৌশলে। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত অ্যাডাম অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল হক মুকুল বলেন, ইইউর দেশগুলোতে পণ্য পৌঁছানোর সময় এবং ব্যয় সাশ্রয়ী রুট হচ্ছে সুয়েজ খাল এবং পানামা খাল ব্যবহার করা। এতে অন্তত ১৫ দিন সময় বেঁচে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতার কারণে সাশ্রয়ী এই রুট ব্যবহার করতে না পারলে আটলান্টিক মহাসাগর ব্যবহার করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য ব্যবস্থায় যা বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলবে।

তিনি বলেন, ক্রেতারা সময় মতো পণ্য পাওয়ার বিষয়ে সংশয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্রেতা বিকল্প দেশে রপ্তানি আদেশ দিচ্ছে। জিয়া অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে সময় মতো পণ্য হাতে পাওয়া যাবে না- এমন শঙ্কায় রয়েছে ক্রেতারা। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা আছে ইউরোপের এমন অনেক ক্রেতা তাদের কাছাকাছি দেশ তুরস্কে রপ্তানি আদেশ স্থানান্তর করছে বলে শোনা যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে পণ্য পৌঁছাতে এখন সময় বেশি লাগছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসারায়েলি হামলার সময় থেকেই রপ্তানি পণ্য পরিবহণে সুয়েজ খাল এবং লোহিত সাগর ব্যবহার বিঘ্নিত হয়। পণ্যবাহী জাহাজে প্রায়ই হামলার ঘটনা ঘটছে। নতুন করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে তা আরো কঠিন হয়ে পড়ল। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নতুন বাজার গড়ে তোলার প্রচেষ্টাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই অঞ্চলের ১৮টি দেশে রপ্তানি বাড়াতে গত কয়েক বছর ধরে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার এবং তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত