ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ টাকা কেজির ঢ্যাঁড়শ ঢাকায় বিক্রি ২০ টাকায়

পাঁচ টাকা কেজির ঢ্যাঁড়শ ঢাকায় বিক্রি ২০ টাকায়

চাষির ঢ্যাঁড়স হাটে-বাজারে পাইকারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পাঁচ টাকায়। সেই ঢ্যাঁড়স ব্যবসায়ীরা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। ফলে একহাত বদলে প্রতিকেজি ঢ্যাঁড়সের দাম বেড়ে যায় ১২ থেকে ১৫ টাকা। যার সবই পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।

চাষিদের অভিযোগ- চার হাজার টাকা প্রতিকেজি ঢ্যাঁড়সের বীজ কিনে জমিতে বপন করতে হয়েছিল। এছাড়া কিটনাশক, সার, সেচ ছাড়াও বিভিন্ন খরচ রয়েছে ঢ্যাঁড়স উঠতে শুরু হওয়া পর্যন্ত। ঢ্যাঁড়স চাষে জমিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে দাম না পাওয়া হতাশ চাষিরা। সরেজমিন রাজশাহী পবা উপজেলার খড়খড়ি সবজিরহাটে গিয়ে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এই হাট ভোর থেকে বসে। হাটে প্রতিদিন ঢ্যাঁড়স বিক্রি করেন, বুধপাড়া, পশ্চিম বধুপাড়া, মৌলভী বুধপাড়া, কুখুন্ডি, পবার পাড়ীলা, মেহেরচন্ডী, রামচন্দ্রপুর, মল্লিকপুরসহ আশপাশের গ্রামের অন্তত ৩০-৪০ জন চাষি। হাসান বলেন, রমজান মাস থেকে ঢ্যাঁড়সের দাম নেই। ১২ রমজানের ডিদেক ঢ্যাঁড়স পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাল্লা দরে (পাঁচ কেজি)। কিন্তু সেই ঢ্যাঁড়সের বাজার নেমেছে ২৫ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ ২০০ টাকা মণ দরে ঢ্যাঁড়স কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু এই ঢ্যাঁড়স আবার ভ্যানগাড়ি বা সবজি বিক্রেতার কাছে কিনতে গেলে দিতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা প্রতিকেজির দাম। তিনি বলেন, ঢ্যাঁড়স হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। চার-পাঁচ টাকার উপরে দাম বলছে না। রাগ করে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করিনি। নিয়ে গিয়ে বড় ভাইয়ের গরুকে দিয়েছি। তার একদিন পরে ঢ্যাঁড়স তুলে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছি। তাদের গরু আছে। এছাড়া হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসলে খাজনা ও মাপার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয় চাষিদের। সজিব নামের এক ঢ্যাঁড়স বিক্রেতা বলেন, জমি থেকে ঢ্যাঁড়স তুলতে যে নারী শ্রমিক লাগে তাদের পারিশ্রমিক হচ্ছে না। তাদের প্রত্যেককে দিতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক বিঘা জমির ঢ্যাঁড়স তুলতে কমপক্ষে চারজন নারী শ্রমিক লাগে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই মণ ঢ্যাঁড়স হচ্ছে। এ ঢ্যাঁড়স বিক্রি করে শ্রমিকের টাকাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন একাধিক চাষি। খুচরা ঢ্যাঁড়স ক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, চাষি ও ভোক্তা সবাই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। চাষি হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢ্যাঁড়স চাষ করছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে টাকা পাচ্ছে না। আবার সেই ঢ্যাঁড়স ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে কেজিতে কয়েকগুণ টাকা লুটে নিচ্ছে। আমরা এই হাটে না আসলে বিষয়টা জানতে পারতাম না। চাষিদের ঢ্যাঁড়স হাত বদলে ব্যবসায়ীরা কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। অপরদিকে, রাজশাহীর সাহেব বাজারের মাস্টারপাড়ার চিত্র অনেকটাই কাছাকাছি। তবে তুলনামূলক পবার খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি দামে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করতে পারে চাষিরা। মাস্টারপাড়ায় ঢ্যাঁড়স বিক্রেতা মানিক হোসেন জানান, খড়খড়ি বাইপাসের তুলনায় অনেক ভালো এখানে। সবসময় খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দাম থাকে। তাই অনেকেই এখানে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করতে আসেন। ভ্যানে সবজি ব্যবসায়ী রাজিব আলী জানান, তাদের কেনার থেকে সীমিত লাভে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করেন। শুধু ঢ্যাঁড়স নয়, সবজিতে একই অবস্থা। তবে তার দাবি দোকানের ব্যবসায়ীদের চেয়ে তারা কম দামে সবজি বিক্রি করেন। তবে এই বছর ঢ্যাঁড়স দাম অনেক কম। এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ পারভীন জানান, আমরা পণ্যের দাম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে চাষি নাজ্যমূল্য পাই। এছাড়া বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্যেমে আমরা চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে লিংকেজ করে দিচ্ছে। যাতে করে চাষিরা কৃষি পণ্যের দাম ভালো পাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত