ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তীব্র গরমে ফ্যান-এসি বিক্রির ধুম

চাহিদা বাড়ায় দামও চড়া
তীব্র গরমে ফ্যান-এসি বিক্রির ধুম

তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। রোদের তাপে বাসার বাইরে থাকার অবস্থা নেই। গরমে নাভিশ্বাস চরমে। আবার বাসার ভেতরে ফ্যান ছাড়া থাকা যায় না। গত কদিন ধরেই প্রচণ্ড গরম চলছে দেশের সব অঞ্চলেই। ঈদের পর থেকে তাপমাত্রা কখনো ৩৮ ডিগ্রি আবার কখনো উঠে যাচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী তিন দিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এমনকি তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গতকাল গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও চট্টগ্রামে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুও হয়েছে। এমন অসহনীয় তাপমাত্রায় জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন ভিড় বেড়েছে ফ্যান ও এসির দোকানে। গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে এয়ার কন্ডিশনার এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগেও ক্রেতার অপেক্ষায় থাকত এসির দোকানগুলো। আর এখন তারা ক্রেতা সামাল দিতে খাচ্ছেন হিমশিম। যাদের সামর্থ কম তারা কিনছেন এয়ারকুলার বা ভালো মানের ফ্যান। তবে দাম নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তবে দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।

গতকাল শনিবার মিরপুর-১ কো-অপারেটিভ মার্কেটের পেছনে ইলেকট্রনিক মার্কেটের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্রেতাই সিলিং ফ্যান ও স্ট্যান্ড ফ্যান কিনছিলেন। বিক্রেতারা বলছেন, গত মার্চ থেকে ফ্যান ও এসির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগানেও টান পড়েছে। ব্র্যান্ডের শপগুলো লোকাল দোকানগুলোতে চাহিদা মতো ফ্যান দিচ্ছে না। এজন্য তাদের নন ব্র্যান্ড ও বিদেশি ফ্যান বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। মিলি ইলেকট্রনিক নামের একটি দোকানে স্ট্যান্ড ফ্যান দরদাম করছিলেন বিশবিদ্যালয় ছাত্র রফিকুল। তবে দামে না মেলায় ফ্যানটি কিনেননি তিনি। রফিকুল বলেন, ছোট নন ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর দাম চাইছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত বছর এগুলোর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। গরম বেড়েছে এখন এক ফ্যানে কাজ হয় না। তাই আরেকটি ফ্যান কিনতে এসেছি। আরেকজন ক্রেতা বলেন, ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ১২ ইঞ্চি ফ্যান কোথাও চাইছে ৩ হাাজার ৫০০ টাকা কোথাও ৪ হাজার টাকা। আর একই ব্র্যান্ডের ১৪ ইঞ্চি ফ্যান চাওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট স্ট্যান্ড (৯-১০ ইঞ্চি) বা টাইফুন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার টাকায়। এছাড়া দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান ১ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। একই ব্র্যান্ডের ফ্যানের ভিন্ন ভিন্ন দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, কেউ আগের বছরের অবিক্রিত ফ্যান বিক্রি করছেন তারা কিছুটা কমে দিতে পেরেছেন। ফ্যানের দাম কিছুটা বেড়েছে, গরম বাড়লে দাম আরো বাড়বে। মামুন ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মামুন হোসেন বলেন, আমাদের ফ্যান বিক্রি হয় গরম বাড়লে। এখন সিলিং ফ্যানের চাহিদা বেশি। যেহেতু বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই তাই রিচার্জঅ্যাবল ফ্যানের চাহিদা নেই। আবার বিদ্যুতের সমস্যা না থাকায় ফ্যানও নষ্ট হচ্ছে কম। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিচার্জঅ্যাবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। চাঁদপুর ইলেক্ট্রিক কর্নারের স্বত্বাধিকারী শ্রাবণ বলেন, দেশি ব্র্যান্ডের চাহিদা বেশি। তবে চাহিদা অনুযায়ী ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত রমজান মাসের শুরু থেকেই এ ক্রাইসিস শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফ্যানের পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে এসির। মিরপুর-১ নম্বরে এসকোয়ার ইলেকট্রনিকসে গিয়ে জানা যায়, এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার টাকায়, দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার টাকায়। ভিশন এসি বিক্রি হচ্ছে ৪৭ হাজার ও দেড় টনের ৬৫ হাজার টাকায়। এছাড়া গ্রী এক টনের ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শোরুমগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার দুই এসির বিক্রি ভালো। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই জানেন না, কী ধরনের এসি কিনতে হবে। এছাড়া এসি ইন্সটেলশন চার্জ ১০ হাজার টাকা। আর ক্রেতাদের জন্য সামান্য ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা আছে। বিক্রেতারা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে মাস-তিনেক আগেই পণ্য ভেদে পাঁচ থেকে বিশ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এসির দাম। এক সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

তবে, সামর্থ্যবানদের এসিসহ বাড়িতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, তীব্র গরমে ব্যাপক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে খেটে-খাওয়া মানুষরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত