ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে

বললেন ফরাসউদ্দিন
মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে

শুধু সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চিফ অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তার আগে মজুত বাড়াতে হবে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহারের কথা বলা হয়। সুদহার হলো একটি মাত্র ইনস্ট্রুমেন্ট। মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এখন একটি মোক্ষম সময়। চমৎকার বোরো ফসল হচ্ছে। কোনো সময় আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না। কারণ মধ্যস্বত্বভোগী। যারা চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষ করেছিল, তারা সব সময় তৎপর, এখনো তৎপর। তিনি বলেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা মিলে কৃষকের কাছে গিয়ে বলেন, ধানে পোকা, কিনব না। এতে তারা বিপদে পড়েন। সরকারের কাছে নিবেদন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আড়াইগুণ মজুত বাড়াতে হবে। তিন-চার মাস ধরে যদি খোলা বাজারে অপারেশন করতে চালানো যায়, চাল-ডাল-পণ্য বিক্রি করা যায় এবং বাজার মনিটরিং করা যায়, তাহলে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে। তবে অবশ্যই মজুত আগে বাড়াতে হবে। শুধু সুদহার দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। বাজেটের পরিধি বড় হওয়া দরকার জানিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, বাজেটের পরিধি আরো বড় হওয়া দরকার। আইডিয়াল হলো জিডিপির ২০ শতাংশ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আমরা কোনো বছরই শতকরা ১৭ ভাগের বেশি যেতে পারি না। কাজেই অনেকদূর যেতে হবে। সাবেক এ গভর্নর বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বড় প্রশ্ন হলো, আমরা রাজস্ব আদায় করতে পারি না। আমাদের ৯০ লাখ লোকের অনেক রাজস্ব দেওয়ার কথা, তার মধ্যে মাত্র ৯ লাখ লোকের কাছ থেকে আমরা নিতে পারি। আমি বলব এটি আমাদের সিস্টেমের ব্যর্থতা। তাদের (যারা রাজস্ব দেয় না) কোনো দোষারোপ করছি না, তাদের কাছে আমাদের যেতে হবে। মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো পদক্ষেপ কেন নেয় না, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রতি বছর ৭০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। সরকার কেন মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না? ধরার পরও কেন এসবের বিষয়ে অ্যাকশন নেয় না, আমি বুঝতে পারছি না। আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কাউন্সিল সদস্য আরিফ খানের সঞ্চালনায় প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ও এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমিন হেলালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সাহাদাত হোসাইন সিদ্দিক, মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুনির হোসাইন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা, ফাস্ট-ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ করা হবে। মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রথমে আমাদের স্মার্ট অর্থনীতি গড়া দরকার। আর স্মার্ট অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন একটি স্মার্ট বাজেট। ব্যবসায়ীরা অনেক পরিশ্রম করে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ভোগ্যপণ্যসহ সবকিছু সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরা কোনো পর্যায়ে আছেন, সেটি দেখা দরকার। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মূলধনের যোগানো খুবই কঠিন। এটি সহজ করা দরকার। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের ব্যর্থতা আমাদের রাজস্ব। এটাই আমাদের ভিতকে নাড়া দিচ্ছে। বাজেটের সাইজ ছোট কেন? রাজস্বের জন্য।

অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে স্থিতিশীল করতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক সেক্টরের অবস্থা খুবই করুণ। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে কোনো প্রণোদনা চাই না। আমরা চাই লজিস্টিক পলিসি। এর প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার লজিস্টিক পলিসির কারণে যদি আমার খরচ কমে যায়, তাহলে ১০-১৫ শতাংশ পণ্যের দাম কমে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত