হাজারীবাগ ট্যানারি
বাড়ছে চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন ও বাণিজ্য
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
চামড়ার ট্যানারিগুলো ঢাকার সাভারে স্থানান্তরের পর প্রাণহীন হয়ে পড়ে হাজারীবাগ। ভাটা পড়ে নিত্যদিনের ব্যস্ততা ও বাণিজ্যিক প্রবাহে। তবে বর্তমানে দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ফের চেনা রূপে ফিরছে হাজারীবাগ। পরিশোধিত চামড়া সাভার থেকে এনে এখানে তৈরি হচ্ছে জুতা, ব্যাগ, মানিব্যাগসহ নানা রকম চামড়াজাত পণ্য। হাজারীবাগের চামড়াজাত পণ্যের দোকানগুলোয় বছরে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। পণ্যের মানোন্নয়ন, বহুমুখীকরণ এবং উদ্যোক্তা-কর্মীর দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্লাস্টার ম্যাপিং স্টাডি অনুযায়ী, রাজধানীর হাজারীবাগে পুরোনো ট্যানারি পল্লিতে গড়ে ওঠে লেদার ক্লাস্টার। হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় থেকে লেদার টেকনোলজি কলেজ পর্যন্ত হাজারীবাগ বাজার, ধানমন্ডির ৮ নম্বর (নতুন) বাসস্ট্যান্ড গলিসহ পুরো এলাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ দোকান, শোরুম ও চামড়াজাত পণ্যের ছোট কারখানা রয়েছে। হাজারীবাগের ছোট ছোট চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন কারখানা থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাইরেও। দোকানগুলোয় বিক্রি হচ্ছে এখানেই পাকা চামড়া দিয়ে তৈরি জুতা, জ্যাকেট, অফিস ব্যাগ, ওয়ালেট, পার্স, বেল্ট, স্কুলের ব্যাগ ও মেয়েদের হাতব্যাগসহ নানা পণ্য। এছাড়া চামড়ার তৈরি মোবাইল ও ল্যাপটপ কাভার, চাবির রিং, খাবারের বাক্স বহনের ব্যাগ, টিস্যু বক্স, পাসপোর্ট হোল্ডার, ফটোফ্রেম এমনকি সোফার কুশন কাভারও তৈরি হচ্ছে। চলতি ফ্যাশনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পণ্যের রং ও বৈচিত্র্যে রয়েছে আধুনিকতার ছাপ। দামও তুলনামূলক কম। একটি শোরুম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা তৈরি করে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা বলেন, আমরা সাভার থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়া কিনে আনি। এরপর হাজারীবাগে আমাদের নিজেদের কারখানায় বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা তৈরি করি। ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছি আমরা। হাজারীবাগে দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে চালু চামড়া কারখানাগুলো ২০১৭ সালে সরিয়ে নেয়া হয় সাভারে। তখন টানাপড়েনে হাজারীবাগের অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তাতে বেকার হয়ে পড়ে ট্যানারি শ্রমিকসহ কারখানাগুলোর বিভিন্ন বিভাগে কাজ করা বহু মানুষ। তারাই স্বল্প ভাড়ায় পরিত্যক্ত কারখানা ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে শুরু করে চামড়াজাত পণ্য বিক্রির ব্যবসা। এসব দোকানের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলারের বেশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে দেশ থেকে। আগামীতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।