দাম বাড়ায় খোলাবাজারে ‘উধাও’ ডলার
দাম বেড়েছে ৭ টাকা
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডলারের দাম একদিনে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ১১৭ টাকা; যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দর। নিময় অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ১১৮ টাকা বিক্রি করতে পারবে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় মানি চেঞ্জারগুলো ডলার বিক্রি করছে না। আবার যাদের কাছে খুচরা ডলার আছে তারাও বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। কারণ, যেহেতু আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ৭ টাকা বেড়েছে খোলাবাজারে কত বাড়ে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সবাই। এমন পরিস্থিতির কারণে খোলাবাজারে বিক্রি শূন্য হয়ে গেছে ডলার। সংশ্লিষ্টরা এমনই জানিয়েছেন।
দীর্ঘদিন খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করছেন কবির আহম্মেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো ডলারের রেট কত? জানতে চাইলেন কিনবেন না কি বিক্রি করবেন। কিনব বললে, উত্তরে বলেন ডলার নেই, কেউ যদি বিক্রি করে তাহলে ১১৯ টাকা রেট দেব! কিনলে রেট কত? জানতে চাইলে বলেন ডলার নেই, রেট দেব কীভাবে? এরপর মতিঝিল পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে আজকের ডলার বিক্রির রেট কত জানতে চাইলে? সেখানে দায়িত্বরত কর্মী জানান ডলার নেই, তাই রেট বলা যাচ্ছে না। কেউ বিক্রি করলে ১১৭ টাকা ২০ পয়সা পাবে। হঠাৎ ডলার না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম একবারে ৭ টাকা বাড়িয়েছে তাই এ অবস্থা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বাইতুল মোকাররম গুলশান ও বনানীর এলাকায় খোলাবাজারে ডলার ব্যবসায়ী ও মানি এক্সচেঞ্জের কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, আমাদের খুচরা ডলার পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ ঠিক আছে। এখনে কে বিক্রি করবে, কি করবে না এটা তার নিজস্ব বিষয়। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পায়নি তারা ব্যাংকে গেলেই ডলার কিনতে পারবেন। ব্যাংকে এখন ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ক্যাশ ডলার মজুত আছে। যার ডলার দরকার ব্যাংকে গেলেই পাবেন। থাইল্যান্ড চিকিৎসার জন্য যাবেন মাহফুজুর রহমান, মতিঝিল এসেছেন খুচরা ডলার কিনতে। তিনি বলেন, আগামী রোববার থাইল্যান্ড যাবো। আজকে ৫০০ ডলার কিনতে এসেছি। কমপক্ষে ছয়টি মানি এক্সচেঞ্জে ঘুরলাম কেউ ডলার বিক্রি করল না। এখানে এক্সিম ও অগ্রণী ব্যাংকে গেলাম ভিসা পাসপোর্ট দেখালামণ্ডতারপরও বলল সরাসরি ডলার দেওয়া যাবে না। পরে ইউসিবির এক পরিচিত ব্যাংকারকে ফোন দিলাম, বলল অ্যাকাউন্ট না থাকলে সহজে ডলার বিক্রি করতে চায় না ব্যাংক। এরপরও যেতে বলল কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখবে। তবে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ট্রাজারি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব শাখায় ডলার আছে তারা খুচরা ডলার বিক্রি করছে। তবে যে কেউ গেলেই ডলার পাবে না, নিজস্ব ও পরিচিত গ্রাহককেই শাখাগুলো ডলার দিচ্ছি। আজকে বেশিরভাগ ব্যাংক খুচরা প্রতি মার্কিন ডলার বিক্রি করছে ১১৮ টাকায়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তে দীর্ঘদিন ১১০ টাকায় বেধে রাখার পর বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের অফিসিয়াল রেট একদিনে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকায় উন্নীত করেছে। এর ফলে ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়ন করা হয়। এ বিষয় সার্কুলার জারি করে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।